দুধে অ্যান্টিবায়োটিক থাকার কারণ ও এর সমাধান জানিয়েছেন সম্প্রতি গবেষণা করে আলোচনায় আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে (ডুজা) অধ্যাপক ফারুককে হুমকি প্রদান ও অমর্যাদার প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সমস্যা ও সমাধানের কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক দুধ দূষিত হওয়ার পেছনে তিনটি প্রধান সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করেন এবং এ সমস্যা সমাধানে পরামর্শও দেন।
দুধে প্রচুর পরিমাণ জীবাণুর উপস্থিতি তিনি পেয়েছেন উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক বলেন, আমরা আমাদের গবেষণায় তিনটি সমস্যার কথা উল্লেখ করেছি। এর মধ্যে প্রধান হলো দুধে প্রচুর জীবাণু। কিন্তু পাস্তুরিত দুধে এত জীবাণু থাকার কোনো কারণ নাই। যাদের নাকি পাস্তুরিত করার সুবিধা আছে তাদের কিন্তু জীবাণু থাকার কথা না। তার মানে সুবিধাটুকুর সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, ‘‘এটা একটা ব্যবস্থাপনা ত্রুটি। আমরা আহ্বান করব কোম্পানিগুলোকে, যে আজকে দুধের ব্যাপারে সারা দেশে যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এটা দূর করার জন্য। এর জন্য ‘পাস্তুরাইজেশন’ প্রক্রিয়ার মধ্যে যারা কাজ করে তাদের মোডিফাইড করা যেতে পারে।’’
গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো দ্বিতীয় সমস্যা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কেউ কেউ কর্মকর্তা যারা আছেন বা কোম্পানি, তাদের মালিকপক্ষ বলার চেষ্টা করেন যে, গরুর তো অসুখ হবেই, আর অসুখ হলে অ্যান্টিবায়োটিক তো দিতেই হবে। আর অ্যান্টিবায়োটিক দিলে সেটা স্বাভাবিকভাবে দুধের মধ্যে আসে। যেখানে আমাদের কিছু করার নাই। এটা ঠিক নয়। তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন’।
এর সমাধানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে যে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট হোক, ক্যাপসুল হোক, ইনজেকশন হোক এটা দেওয়ার পরে এটা উইথড্র পিরিয়ড আছে। এটা খুব জরুরি। কমপক্ষে ২১ দিন, এই ২১ দিনের মধ্যে দুধটা নেয়া যাবে না এটা নিয়ম। কিন্তু এটা মানা হচ্ছে না’।
এ সময় তিনি আরো বলেন, গরুকে যখন চিকিৎসা করাবেন তখন হিউম্যান অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না। পশু চিকিৎসার জন্য যে সব অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে সেগুলো দেন। এ জন্য আমাদের কোম্পানিগুলোর উচিত হবে এবং আমাদের প্রাণী সম্পদ চিকিৎসকদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, মানুষের অ্যান্টিবায়োটিক গরুর চিকিৎসায় দেওয়া যাবে না’।
গরুর খাদ্যকে তৃতীয় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা গোখাদ্য উৎপাদন করে, তারা এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে দিচ্ছে। এর জন্য আইন রয়েছে, তারপরও তারা মেশাচ্ছে, এটা বেআইনি কাজ। কিন্তু এটা মনিটরিং হচ্ছে না। আমাদের কিছু কিছু কর্মকর্তা সবাই না, আইনটা কেন প্রয়োগ হচ্ছে না সেটা তারা দেখছে না’।
গোখাদ্যের সমস্যার সমাধানে এ অধ্যাপক বলেন, ‘ফিডের ভেতর যাতে অ্যান্টিবায়োটিক না থাকে, এ বিষয়টি যদি সরকারের দপ্তরগুলো যাতে একটু মনিটর করে। বাজার থেকে স্যাম্পল নিয়ে যদি পরীক্ষা করে এবং যেসব ফিড উৎপাদক অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে দিচ্ছে তাদের শাস্তি দেয়। তাহলে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করি’।
এর আগে গবেষক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুককে হুমকি প্রদান ও অমর্যাদার প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাবির সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ.ক.ম. জামাল উদ্দীন একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত অধ্যাপক আ ব ম ফারুক স্যারের গবেষণালব্ধ ফলাফলকে গ্রহণ না করে, তাকে অভিনন্দন না জানিয়ে অসাধু খামার ব্যবসায়ী ও তাদের বশীভূত আমলা নেটওয়ার্ক তাকে হুমকি প্রদান ও কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেছে’।
তিনি আরো বলেন, মৎস প্রাণী সম্পদ মন্ত্রলণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়াসি উদ্দীন ও বিএসটিআইর পরিচালক আব্দুল মান্নান তাকে হুমকি প্রদান করেন ও বেইমান হিসেবে গালাগালি করেন, যা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তো বটেই একজন নাগরিক হিসেবেও তাদের এ ধরনের শিষ্টাচারবহির্ভূত কার্যকলাপ প্রদর্শন আইনত দণ্ডনীয়।
এ সময় তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিএসটিআইর যে সব কর্মকর্তা এ সব কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের অপসারণের আল্টিমেটাম দেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন