সম্প্রতি দেশে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীসহ সাত জেলায় ১৩ দিনে ৫ জন নিহত হয়েছেন। ১১ জনকে গণপিটুনির ঘটনা অনেকের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল থেকে এ খবর জানা গেছে।
সর্বশেষ আজ শনিরবার রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাত পরিচয়ে (৪০) এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে কাঁচাবাজারের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উত্তর বাড্ডায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা পাশাপাশি। সেখানে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনজন বোরকা পরিহিত নারী যান। তারা স্কুলের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। বাধার মুখে দু’জন পালিয়ে গেলেও আরেকজন গণপিটুনির শিকার হন।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক দুই স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন এক নারী। শনিবার সকাল পৌনে ৯টায় ও বেলা পৌনে ১১টায় সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া ও পাইনাদী শাপলা চত্বর এলাকায় এ দুই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক সাখাওয়াত জানান, ৬-৭ বছরের এক মেয়ে শিশুর হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল ওই যুবক। এ সময় শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করলে দুই যুবকের সন্দেহ হয়। তারা ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে শিশুটি নিজের বলে দাবি করে ওই যুবক। ইতোমধ্যে শিশুটির বাবা ঘটানস্থলে গেলে শিশুটি তার বাবার কাছে চলে যায়।
১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার নেত্রকোনার পৌর এলাকার নিউটাউন পচা পুকুর (অনন্ত পুকুর) পাড় এলাকায় ব্যাগ থেকে সজিব নামে এক শিশুর মস্তক উদ্ধারের পর খুনি যুবক গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। নিহত শিশুটি হচ্ছে নেত্রকোনা পৌর এলাকার কাটলি গ্রামের রিকশাচালক রইস উদ্দিনের পুত্র সজিব।
পুলিশ ও এলাকার লোকজন জানান, পৌর এলাকার কাটলি গ্রামের এখলাস উদ্দিনের ছেলে রবিন (৩৫) চকপাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসের সামনে দিয়ে চলাচলের সময় তার ছালার ব্যাগ থেকে একটি মস্তক পড়ে যায়। এলাকার লোকজন তা দেখে ফেলে চিত্কার করতে থাকলে রবিন মস্তক নিয়ে দৌড়ে পালাতে থাকে এবং নিউটাউন পচা পুকুরের নিকট পৌঁছামাত্র চারদিক থেকে আসা লোকজনের গণপিটুনিতে সে নিহত হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও থানার ওসি এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে যান এবং শিশুর মস্তক ও নিহত যুবকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা মর্গে নিয়ে যান।
১৬ জুলাই চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ছেলে ধরা সন্দেহে তিন ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয় জনতা। উপজেলার ছিপাতলী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। গণধোলাইয়ের শিকার তিনজন হলেন- কক্সবাজার জেলার লোহাগড়া থানার আব্দুল মালেক (৬০), নুর কবির (২৮) ও নুর ইসলাম (৬০)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকালে একটি প্রাইভেটকারে করে ওই তিন ব্যক্তি এলাকায় আসেন। অপরিচিত হওয়ায় তাদের দেখে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তিনজনের কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ আরও বাড়ে। একপর্যায়ে উপস্থিত লোকজন তিনব্যক্তিকে গণপিটুনি দেয়।
১২ জুলাই পটুয়াখালীতে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে দাদন মিয়া (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সদর উপজেলার গেরাখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত দাদন মিয়া মাদারীপুরের ডিগ্রিরচর এলাকার বাসিন্দা মোহন মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে গেরাখালী এলাকার বাসিন্দা সিরাজের বাসায় গিয়ে দরজায় ধাক্কা দেন দাদন মিয়া। ওই বাড়িতে তখন তিনজন লোক ছিলেন। পরে পাশের বাড়িতে তারা মোবাইল করে বিষয়টি জানান। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ছেলে ধরা সন্দেহে দাদন মিয়াকে গণপিটুনি দেয়।
১১ জুলাই বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় ‘ছেলেধরা ও গলাকাটা’ সন্দেহে দুই যুবককে পিটুনি দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। নলচিড়া ইউনিয়নের কা-পাশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থালে গিয়ে ওই দুজনকে উদ্ধার করেছে।
ঘটনার শিকার ওই দুই যুবকের নাম তরিকুল ইসলাম (২৯) ও মিজানুর রহমান (২৮)। তাঁরা মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, টেকেরহাট চরপ্রসন্নদী জামেয়া আরাবিয়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার সাহায্যের জন্য টাকা তুলতে তরিকুল ও মিজানুর বুধবার কা-পাশা গ্রামে যান। এরপর কয়েকটি বাড়ি থেকে টাকা তোলেন। তবে এ সময় গ্রামের কা-পাশা নুরানী তালীমুল মাদ্রাসার সুপার মাহামুদুল ইসলাম গ্রামের যুবকদের ডেকে জানান, এলাকায় ছেলেধরা ও গলাকাটা প্রবেশ করেছে। এরপর যুবকেরা ওই দুজনকে খুঁজে বের করে পিটুনি দেন।
১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকেই ছেলেটি আশুগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকায় ঘুরাফেরা করছিল। এ সময় তার চলাফেরা সন্দেহজনক হওয়ায় এলাকাবাসী তাকে আটক করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তার কথাবার্তা এলোমেলো পায়। এ সময় এলাকাবাসী তাকে গণপিটুনি দেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। গ্লাসের একটি সাদা মাইক্রোবাস আটক করেছে র্যাব-১৪ ও পুলিশ। এ সময় ড্রাইভার পালিয়ে গেছে।
০৭ জুলাই লক্ষ্মীপুরে ছেলে ধরা সন্দেহে অজ্ঞাত পরিচয় এক বৃৃদ্ধকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। সদর উপজেলার মাইলের মাথায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ আহত বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
স্থানীয়রা জানায়, রাস্তার পাশে একা পেয়ে স্থানীয় জয়নাল নামে এক ব্যক্তির শিশুকে অপহরণের চেষ্টা করছিল ওই বৃদ্ধ। এমন সন্দেহে স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন