আর মাত্র ২ দিন পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী একজন, স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৩ জন, এছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপির এক নেতা রয়েছেন।
নির্বাচনে প্রার্থীদেরকে নিজেদের আয়-ব্যয়, সম্পদের বিবরণ ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ বিস্তারিত তথ্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করতে হয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থী নোটারী পাবলিকে হলফনামার মাধ্যমে নিজেদের তথ্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছেন।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান মিজান হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি হবিগঞ্জ পৌরসভার উমেদনগরের বাসিন্দা আলহাজ্ব মো. মর্তুজ আলীর পুত্র। তিনি ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। হলফনামায় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি উল্লেখ করেছেন। এছাড়া পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মেসার্স সুরমা অটো রাইস মিলস (ধান ও চাল প্রক্রিয়াজাতকরণ) প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বধিকারী। তার বাৎসরিক আয় হিসেবে তিনি ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, অন্যান্য অংশীদারী থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫শ' টাকা উল্লেখ করেছেন। এ হিসেবে তার মাসিক আয় ৩৩ হাজার ১২৫ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজ নামে ব্যাংকে জমা ৫০ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রীর ৫০ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রীর ১০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। নিজ নামে অকৃষি জমি রয়েছে ১৫ শতক ও যৌথ মালিকানা ৭.৫০ শতক। এছাড়াও পরিবারের যৌথমালিকানা কৃষি জমি রয়েছে ১৬০ কেদার। দালান (আবাসিক-বাণিজ্যিক) ২.৬৪ শতক, বাড়ি বা এপার্টমেন্টের জায়গা রয়েছে ৭.৫০ শতক। যৌথমালিকানা সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের মালিক তিনি। তার বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৮ টাকা, পূবালী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় ১ কোটি ও আইডিএলসি ফাইনান্স লিমিটেডে ১ কোটি ৯১ হাজার ৩৭৬ টাকা সিসি লোন রয়েছে। তিনি নিয়মিত মাসিক কিস্তিতে সেগুলো পরিশোধ করছেন। তবে তার নামে কোন মামলা নেই।
স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। হবিগঞ্জ শহরের মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার ধ্রুবজ্যোতি পুরকায়স্থ ও দীপ্তি পুরকায়স্থ’র ছেলে টিটু ১৯৭১ সালের ৯ মার্চ জন্মগ্রহন করেন। হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে তিনি বিএ-এলএলবি উল্লেখ করেছেন। তার আইন পেশা থেকে বাৎসরিক আয় হিসেবে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা উল্লেখ করেন। এ হিসেবে তাঁর মাসিক আয় ১৮ হাজার ৮৪৬ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ রয়েছে ২ লাখ টাকা ও ব্যাংকে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর ৫ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। বাসায় ফ্রিজ, রঙিন টিভিসহ আসবাবপত্র রয়েছে।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সৈয়দ কামরুল হাসান হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। তিনি শহরের পুরান মুন্সেফী এলাকার বাসিন্দা মরহুম সৈয়দ রফিক আলী ও সৈয়দা সৈয়দা বানুর পুত্র। তিনি ১৯৬৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহন করেন। হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি উল্লেখ করেছেন। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসা থেকে তাঁর বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ হিসেবে তার মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকা রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা রয়েছে ৩ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর ৫০ হাজার টাকা ও বিবাহের উপহার ২০ ভরি স্বর্ণালংকার। স্থাবর সম্পদ হিসেবে তার নামে কৃষি জমি রয়েছে ১৬ শতক যার অর্জনকালীন মূল্য ১০ লাখ টাকা। আরো ৫ কেদার ভূমির অর্জনকালীন মূল্য ৫ লাখ টাকা। এছাড়াও যৌথমালিকানা কৃষি জমি ২০ কেদার, অকৃষি ২০ শতক, বাসার ৪ শতক। যৌথমালিকানার সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের অংশীদার তিনি। তাঁর নামেও কোন মামলা নেই।
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মর্তুজ আলী হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি শহরের কোর্টস্টেশন এলাকার বাসিন্দা শীষ আলীর পুত্র। তিনি ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। হলফনামায় তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলবি ফাইনাল উল্লেখ করেছেন। তিনি পেশা হিসেবে শিক্ষানবীস আইনজীবী উল্লেখ করেন। কৃষিখাত থেকে তাঁর বাৎসরিক আয় ১০ হাজার টাকা, বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া ৫০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয়। এ হিসেবে তার মাসিক আয় ৫ হাজার ৮৩৩ টাকা। তার স্ত্রীর চারি থেকে বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ রয়েছে ১ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ও তার স্ত্রীর ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও তার ১০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে, মূল্য ২ লাখ টাকা, তার স্ত্রীর ৫ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে যার মূল্য ১ লাখ টাকা। এছাড়াও তার বাসায় ফ্রিজ, টিভিসহ আসবাবপত্র রয়েছে ৮০ হাজার টাকার। তার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ২৯ শতক অকৃষি জমি। ২টি সেমি পাকা টিনশেডের ঘর রয়েছে। তার স্ত্রী পৈত্রিক সম্পত্তি ৬ শতক বাড়ি ২টি সেমিপাকা ঘর রয়েছে। তার নামে কোন মামলা নেই।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ইসলাম তরফদার তনু হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি শহরের মাস্টার কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা মরহুম ইসহাক তরফদার ও সৈয়দা সালেমা খাতুনের ছেলে। তিনি ১৯৬৮ সালের ২ আগস্ট জন্মগ্রহন করেন। হলফনামায় তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস উল্লেখ করেন। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। অতীতে তার নামে ৩টি মামলা ছিল। সেগুলো থেকে তিনি অব্যাহিত পেয়েছেন। বর্তমানে তার নামে ৬টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো থেকে তিনি জামিনে মুক্ত ও বিচারাধীন রয়েছে। হলফনামায় তাঁর ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করেন। এ হিসেবে তার মাসিক আয় ২০ হাজার ৮৩৩ টাকা। তার নগদ ১ লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা রয়েছে ১ হাজার টাকা। বাসায় ফ্রিজ, রঙিন টিভিসহ আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়াও তার স্ত্রীর ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১টি মোবাইল ফোন রয়েছে। তার নিজ নামে অকৃষি জমি ০.১০ একর ০.০৯ একর। দালান, আবাসিক/বাণিজ্যিক .০১৯৫ একর। তার স্ত্রীর নামে ০.০৫২৫ একর জায়গা রয়েছে। তার নিজ নামে আইএফআইসি ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখা থেকে ১ লাখ টাকা সিসি লোন রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন