কিছুটা ব্যতিক্রমই বলা চলে। নিজ দপ্তরের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর জানতে চান গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। জানান, প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে তিনি কাজ করেন। এখন পর্যন্ত ১২টি কমিটি হয়েছে।
মন্ত্রী এমনও জানিয়ে দিলেন, তদবিরে তিনি টলেন না। ওপরে আল্লাহ আর নিচে শেখ হাসিনা। মাঝামাঝি আর কেউ নেই যার কথা তাকে রাখতে হবে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন মন্ত্রী। এ সময় তিনি মন্ত্রণালয় এবং আওতাভুক্ত সংস্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন ধরে থাকা কর্তাদের বদলি করার কথা জানিয়ে একটি উদাহরণও তুলে ধরেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘গণপূর্তের একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, সে নাকি এত প্রভাবশালী যে তাকে ছোঁয়া কারো পক্ষে সম্ভব না। শুনলাম সে নাকি সমিতি করে, আমার দল করে, সাংঘাতিক পাওয়ারফুল অ্যাসোসিয়েশনের নেতা। অপরাধের খতিয়ান খুঁজলাম, দেখলাম সে সাংঘাতিক বেপরোয়া।’
‘তারে বদলির জন্য একটা মানসিক আগ্রহ নিলাম, সে তদবির করালো বড় বড় জায়গা থেকে। ভাবলাম এত তদবির যখন, তখন তার বিরুদ্ধে আন্তরিক হওয়া উচিত, তাকে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে পোস্টিং দিয়েছি। কোনো তদবির তাকে ঠেকাতে পারেনি। আমরা চাই সকলে মিলে ভালো কিছু করতে। আমি নিজে একটা ওয়াদা করেছি, উপরে আল্লাহ, নিচে শেখ হাসিনা; মাঝখানে আমার কোনো তদবির নেই।’
তবে রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা রাতারাতি উচ্ছেদ করা সম্ভব না বলেই মনে করেন পূর্তমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাতারাতি সব উচ্ছেদ করতে পারব না। কিন্তু আমি যদি টেন পারসেন্ট দুর্নীতিকেও স্টপ করতে পারি, আমি মনে করব আমি কিছু পারছি।”
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হয়েই মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন রেজাউল করিম। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী দায়িত্ব পেয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। আর ঘোষণা দিয়েছেন, রাজউকসহ তার অধীনে থাকা সংস্থার অচলায়তন ভাঙার।
নিজ দপ্তরের অপরাধ, অনিয়ম বা দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ দেখতে চান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যেন নিউজ না হয়, কিন্তু আমি বলি উল্টোটা। আমি ভিন্ন স্রোতে চলতে চাই। আমিসহ আমার অধীন ১২টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে কিছু নিউজ না করলে, কোনও খবর তো পাব না। অ্যাকশন নিতে হলে খবর পাওয়া দরকার।’ তবে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে কারও মানহানি না করার আহ্বান জানান তিনি।
অনিয়মের খবর কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তার তদন্ত করা হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নিউজের উপর ভর করেই ১২টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’
‘অননুমোদিত ভবন আমারটাও ভাঙেন’
রাজধানীতে নিয়ম না মেনে নির্মিত সব বিল্ডিং ভেঙে ফেলা হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ভবন যদি কোনো ব্যক্তির আয়ের উৎসও হয়, তা কোনোভাবেই মানুষের জীবনের চেয়ে বড় হতে পারে না।
মন্ত্রী বলেন, নতুন ঢাকায় যারা নিয়ম না মেনে বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন, তাদের একেবারে অনিয়মের বিল্ডিংগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। যেসব ভবনে কিছু অনিয়ম হয়েছে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলাদা পিলার বা আলাদা ভিত্তি দিয়ে টিকেয়ে রাখা সম্ভব, সেগুলোকে ছাড় দেওয়া হলেও ঝুঁকি সৃষ্টি করে এমন ভবন ছাড় পাবে না।
‘যেটাকে কোনোভাবে রাখা যাবে না যদি তারা (ভবন মালিক) ভাঙতে না চান সেসব বিল্ডিং আমরা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ও ব্যবহার অনুপযোগী বলে সিলগালা করে দেব। ওই বিল্ডিং ব্যবহারও করতে দেব না। কারণ মানুষের জীবনের মূল্যের চেয়ে কোনো ব্যক্তির বিল্ডিংয়ের আয়ের উৎসের জায়গাটা আমাদের কাছে কোনোভাবে বড় না।’
বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা তুলে ধরে রেজাউল করিম বলেন, সেখানে ৬২ জন কর্মকর্তাকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই দুর্ঘটনার পর রাজউকের ২৪টি দলে কাজ করে এক হাজার ৮১৮টি বাড়িতে (বহুতল ভবন) অনিয়ম পাওয়া গেছে। মন্ত্রী বলেন, ‘এসব বাড়ির অনেক মালিক অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি; ক্ষমতায়, রাজনীতিতে, অর্থে, তাদের সম্পর্কে রিপোর্ট করা হবে অনেকেই ভাবেননি, কারণ তারা এত পাওয়ারফুল। এসব বিল্ডিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি, আপনারা আমাদের সাহায্য করেন।’
‘তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি, বলেছি একটা বাড়িও ড্রপ হবে না। যদি কোনো মন্ত্রী-এমপির বাড়িও হয়, আমার নিজের কোনো আত্মীয়-স্বজনও হয়, ড্রপ হবে না, আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।’
পুরান ঢাকায় পাঁচশ বছরের বেশি পুরনো ভবন থাকার তথ্য দিয়ে পূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাইলেই সেগুলোকে ভেঙে ফেলতে পারব না। বিকল্প ব্যবস্থা করে ওটাকে পরিবেশসম্মত ও ঝুঁকিহীন অবস্থায় নিতে আমরা নতুন করে ডেভেলপমেন্ট করার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে প্রস্তাব করেছি।
বিজিএমইএ ভবন প্রসঙ্গ
আরেক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘বিজিএমইএ ভবন ভাঙার দায়িত্ব যারা পাবে, তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করা হবে। “কী প্রক্রিয়ায় তারা ভবনটি ভাঙবেনৃ সেই প্রক্রিয়া যদি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয় কোনোভাবেই সেই প্রক্রিয়ায় আমরা বিল্ডিং ভাঙতে দেব না।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সংগঠনটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত ব্যক্তব্য দেন।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন