‘বাজেটের আকার বৃদ্ধি কোনো চমক নয়। পরিমাণ ও গুণগত মান ঠিক রেখে তা কতটা বাস্তবায়ন হয় সে বিষয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। বাজেটে জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। বর্তমানে আমাদের বাজেট হয়ে গেছে অনেকটা ছঁকবাধা, তাই বাজেটের কাঠামোগত সংস্কার দরকার।’
শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ‘বাজেট ২০১৯-২০২০ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের পক্ষে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই পরিসংখ্যান ব্যুরোর সামর্থ্য বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বাজেটের আকার বৃদ্ধি কোনো চমক নয়। এটা বয়স বাড়ার মতো, প্রতিবছর বাড়তেই থাকবে। বরং বিভিন্ন খাতে বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়া হয় পরিমাণ ও গুণগত মান ঠিক রেখে তা কতটা বাস্তবায়ন হয় সে বিষয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। বাজেটে জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকারের আগ্রহ দেখা যায়, অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায় না।
তিনি বলেন, ‘জুন-জুলাই অর্থবছরের সময়সীমা হওয়ায় নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। জুনে বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পায়। পাকিস্তানসহ দু তিনটা দেশ ছাড়াও কোথাও জুন-জুলাই অর্থবছর নেই। তাই এর পরিবর্তন করা দরকার।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম. হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে বাজেট নিয়ে সংসদে এত আলোচনা হয় না। কিন্তু বাজেট আলোচনায় প্রান্তিক মানুষের সমস্যা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। আমরা দেখেছি, বাজেটে কৃষকের সমস্যা দেখা হয়নি। ধানের উৎপাদন মূল্য কম হওয়ার জন্য ভর্তুকি দেয়ার দরকার ছিল, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ বাজেটে নেয়া হয়নি।’
সুজন সভাপতি আরও বলেন, ‘হলফনামার তথ্যানুযায়ী, আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী দেশের শীর্ষ ধনীদের একজন। তিনি আমাদের মতো দরিদ্রদের জীবন নিয়ে কতটা ভাববেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।’
সুজন’র সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বর্তমানে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে। এগুলোর অনেকগুলো জিডিপি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখলেও রামপাল এবং রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো অনেকগুলো প্রকল্প হলো আমাদের জন্য ভয়ানক প্রকল্প। ভূমিকম্প হলে রূপপুর প্রকল্প আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে নিয়ে আসবে। রূপপুর প্রকল্প থেকে যে বর্জ্য নির্গত হবে তার কী ব্যবস্থা হবে আমরা সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। দরকার মানুষের অবস্থান ও অবস্থানের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো। বিশেষ করে দরকার দরিদ্র মানুষের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো। বর্তমানে আমাদের বাজেট হয়ে গেছে অনেকটা ছঁকবাধা, তাই বাজেটের কাঠামোগত সংস্কার দরকার বলে আমি মনে করি।’
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়রে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ও কলামিস্ট আব্দুল লতিফ মণ্ডল, বিআইডিএস-এর গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী এবং সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার প্রমুখ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন