সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ আজ বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে এসে বলেছেন, আমরা সৌরভকে ফিরে পেতে চাই জীবিত এবং অক্ষত অবস্থায়। সেটাই আমাদের দাবি। আমরা আর তো কিছু চাচ্ছি না। প্রায় ১১ দিন পার হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত আমার ভাগ্নে সৌরভের আপডেট কোনো খবর আমাদের কাছে পৌঁছেনি।’
সোহেল তাজ বলেন, ‘আজকে সকালে লাইভে এসে আমি বলেছিলাম, সৌরভের হোয়াটসআপ নম্বর থেকে কল এসেছিল রাতের বেলা। কিন্তু সেই কলের অপরপ্রান্তে কে বা কারা সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না। কারণ আমরা কারো গলার আওয়াজ পাইনি। আমরা কিছুই শুনতে পাইনি।’
সোহেল তাজ আরো বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সেই সংবাদ সম্মেলনে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে সব উল্লেখ করেছি। ঘটনার বিবরণ দিয়েছি। আমরা মাননীয় প্রাধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছি এবং আমার বিশ্বাস তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন সৌরভকে উদ্ধার করার জন্য।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাংবাদিক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রশ্ন রেখে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ বলেন, ‘সৌরভকে উদ্ধার কাজে সহায়তা করার স্বার্থে এই প্রশ্নগুলো সবার সম্মুখে পরিবারের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের করছি। এখানে অভিযোগ এসেছে, সৌরভকে অপহরণ করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে এবং ডিটেইল করে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখে সৌরভকে উত্তরা র্যাব হেড কোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে আসা হয়। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এখানে কে দোষী বা দোষী না সেটা মুখ্য না। এটা একটি অভিযোগ। এটা কি তদন্ত করে দেখা হয়েছে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?’
সোহেল তাজ আরো বলেন, ‘পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বনানী থানার ওসি সৌরভকে ফোন করে থানায় ডাকেন। এবং সে ১২ তারিখে থানায় গিয়েছিল। আপনারা কি বনানী থানায় কোনো ডিপার্টমেন্টাল তদন্ত শুরু করেছেন? কে ডেকেছিল, কার নির্দেশে ডেকেছিল? না করলে কেন করেননি?’
‘পরে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাকে (সৌরভ) ডেকে নিয়ে যায় তার কর্মস্থল ব্র্যাকে। তার পিতার কাছে পাসপোর্টের কপি চায়। আপনারা কি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিকুয়েস্ট করেছেন ঘটনা জানার জন্য? কোনো ইনকুয়্যারি কি চালু করেছেন? কারণ এগুলোই তো ঘটনার সূত্র। আমরা যদি এসব তথ্য জানতে পারি তাহলে সৌরভকে উদ্ধার করতে পারব। তাহলে এটা কি উদ্ধার কাজে সহায়তা করবে না?’
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ বলেন, ‘এখানে আরো একটি অভিযোগ আছে। ২০১৯ সালের ১৬ মে সৌরভকে বনানীর একটি বাসা থেকে সবার সামনে (সেখানে অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তিরা স্বাক্ষী আছেন) মোবাইল ট্র্যাকার দিয়ে বাসার ভেতর থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ১৬-১৭ ঘণ্টা হাতে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে কালো কাপড় চোখে দিয়ে ইনটেরোগেশন করে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জিম্মিনামায় স্বাক্ষর নিয়ে তাকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনার সত্যতা আছে কি না, তা কি আপনারা যাচাই করেছেন? এ রকম খবর তো আমরা পাইনি।
আপনারা মূল ঘটনার সূত্রপাত সম্পূর্ণভাবে অবহেলা করেছেন এবং আজকে যারা ফুটেজ নিয়ে সৌরভকে রিকভারি করবে তাদের কাজ আপনারা কঠিন করে দিয়েছেন। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার প্রশ্ন, কেন আপনারা অভিযোগগুলোকে আমলে নিয়ে তা খতিয়ে দেখেননি? কেন ডিপার্টমেন্টাল তদন্ত শুরু করেননি?
একটি তুচ্ছ, পারিবারিক ঘটনাতে রাষ্ট্রের একটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। আপনারা কি তদন্ত শুরু করেছেন? যদি না করে থাকেন, তাহলে কেন করেননি? সাংবাদিকদের কাছেও আমার একই প্রশ্ন। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারে সুনজর দিবেন। এই ইনকোয়ারিগুলো দ্রুত শুরু হবে এবং এটার সত্যতা আছে কি না তা যাচাই হবে। আমরা সৌরভকে ফিরে পেতে চাই জীবিত এবং অক্ষত অবস্থায়। সেটাই আমাদের দাবি, আমরা তো আর কিছু চাচ্ছি না। আমি আপনাদের কাছে এই তথ্যগুলো দিলাম। কারণ, আমি বিশ্বাস করি এই রকম একটি কেসে দুটি ইনকোয়ারি লাইন থাকতে হবে। একটা হচ্ছে, তাকে উদ্ধার করার অভিযান এবং অভিযোগগুলোকে খতিয়ে দেখা। এসব তদন্ত করলেই বোঝা যাবে কেউ ব্যক্তি স্বার্থে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে কি না। আমরা সৌরভকে চাচ্ছি, আর কিছুই চাচ্ছি না।’ বলছিলেন সোহেল তাজ।
অপহৃত সৌরভের পুরো নাম সৈয়দ মোহাম্মদ ইফতেখার আলম। তিনি সোহেল তাজের মামাতো বোনের ছেলে। সৌরভ ঢাকার ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে ব্র্যাকের একটি ডক্যুমেন্টারি নিয়ে কাজ করছিলেন।
সৌরভকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়ে সোমবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান। সওদা নামের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সোহেল তাজও উপস্থিত ছিলেন।
সৌরভের মা বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে আমার আকুল আবেদন, আপনার হস্তক্ষেপে আমি ফিরে পেতে পারি আমার বুকের ধন, আমার বাবা সৌরভকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানান সোহেল তাজ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী যোগাযোগ রাখছে। সৌরভের মোবাইল ফোনে যে নম্বর থেকে কল এসেছে, দেখা গেছে যে সেটা ঢাকার একজনের নম্বর। একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার একজন কর্মকর্তার নম্বর।
গত ৯ জুন চট্টগ্রাম থেকে অপহরণ করা হয় সৌরভকে। এরপর ১৪ জুন রাত ১টার দিকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোহেল তাজ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তাঁর ভাগ্নেকে অপহরণের কথা জানান। ওই পোস্টে সোহেল তাজ লেখেন, ‘আমার মামাতো বোনের ছেলে (ভাগিনা), সৈয়দ ইফতেখার আলম প্রকাশ (সৌরভ) কে গত রবিবার ৯ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হসপিটালের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়েছেI যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে অনুরোধ করছি সৌরভকে ফিরিয়ে দিতে তার পরিবারের কাছেI অন্যথায় আপনাদের পরিচয় জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবেI ঘটনার আড়ালে কারা আছেন তা আমরা জানি।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম ভূঁইয়া শুক্রবার এনটিভিকে বলেন, ঈদের ছুটিতে সৌরভ চট্টগ্রামের বাসায় আসেন। গত ১০ জুন পরিবারের পক্ষে তাঁর বাবা থানায় জিডি করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ জুন কেউ একজন সৌরভকে ফোন করে জানায়, আইটি সেক্টরে তাঁর চাকরির বিষয়ে বায়োডাটার জন্য দুজন অফিসার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর আফমি প্লাজার সামনে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁদের কাছে তাঁর বায়োডাটা দিতে বলেন। সৌরভ ওই দিন সন্ধ্যায় সেখানে যাওয়ার পর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন