আমরা অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হলেও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও সমান অধিকারের ক্ষেত্রে এখনো অনেক দূরে আছি বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।
রাজধানীর ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে বুধবার হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৩ বছর: ন্যায়বিচারের দাবি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেনে।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি। এখন উন্নত দেশের পথে আছি।কিন্তু মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও সমান অধিকারের ক্ষেত্রে এখনো অনেক দূরে আছি।’ সুলতানা কামালের প্রশ্ন, ‘আমরা উন্নত হচ্ছি বটে, কিন্তু সভ্য হচ্ছি কি?’
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউল্যালাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন এইচডব্লিউএফের তখনকার সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা। এ ঘটনার পর একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদন আজও প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া গত ২৩ বছরে ৩৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা এ ঘটনার প্রতিবেদন দিয়েছেন। কল্পনার পরিবারের পক্ষ থেকে সেসব প্রতিবেদনে নারাজি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৮ জুন আদালত শুনানির আয়োজন করেন এবং নারাজির ওপর পুলিশকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ বারবার সময় চেয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ৩ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।
কল্পনা চাকমা অপহরণের মামলায় এই দীর্ঘসূত্রতার কঠোর সমালোচনা করে সুলতানা কামাল বলেন, কল্পনা চাকমাকে উধাও করে দেওয়া হয়েছে। এটা করার মাধ্যমে ওই শিক্ষাই দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল যে, কেউ প্রতিবাদী হবে না। কল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিবাদী সত্তাকেও তারা উধাও করে দিতে চেয়েছে।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘আজ ২৩ বছরের এ ঘটনার কোনো সুষ্ঠু বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। এর দায় রাষ্ট্রকে নিতেই হবে। কল্পনা চাকমা অপহরণ বিচারহীনতার এটি জলজ্যান্ত উদাহরণ। এটা রাষ্ট্রীয় নির্মমতার প্রতীক। পাশাপাশি কল্পনা নিজে আমাদের কাছে সংগ্রামেরও প্রতীক।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘দেশে ক্ষমতার রাজনীতির পালাবদল হয়েছে, কিন্তু মানবিক অধিকারের বিষয়ে আমরা কতটা উন্নয়ন করতে পেরেছি—এই প্রশ্ন আজ করতেই হবে। মানবিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো সরকারই কার্যকর কিছু করেননি।’
সভায় নারীনেত্রী খুশী কবির বলেন, ‘কল্পনার কণ্ঠস্বর রোধ করতে তাকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। কিন্তু কল্পনা আমাদের অগ্নিশিখায় পরিণত হয়েছেন।’
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘২৩ বছর আগে একটি মেয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে। তাকে খুঁজে দেওয়ার দায়িত্ব তো রাষ্ট্রেরই।’
সভায় সাংসদ লুৎফুননেছা খান বলেন, কল্পনা প্রতিবাদী নারী ছিলেন। কল্পনার অপহরণের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার রাষ্ট্রের স্বার্থেই।
সভায় আরও বক্তব্য দেন নারীনেত্রী রাখী দাশ পুরকায়স্থ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা, সাংবাদিক বিপ্লব রহমান, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব চঞ্চনা চাকমা। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ ও সঞ্চালনা করেন ফাল্গুনী ত্রিপুরা। সভাপতিত্ব করে মনিরা ত্রিপুরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন