বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সংযুক্ত সম্পাদক কবি অসীম সাহা তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ মে) গণভবনে পেশাজীবীদের সম্মানে প্রধানমন্ত্রীর ইফতার আয়োজনে আমন্ত্রণপত্র না পেয়ে তিনি রাতেই এই স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গণভবন আমার জন্যে নিষিদ্ধ। কেন জানেন?” এছাড়া, তিনি স্ট্যাটাসের কমেন্টে লিখেছেন, আমি কাঙাল বা ভিখিরি নই। যারা ষড়যন্ত্র করে আমার গণভবনে যাওয়ার পথ বন্ধ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেই তা খুঁজে বের করতে হবে!
তার ছোট্ট এই স্ট্যাটাসটি নিয়ে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে অনেকেই এর কারণ জানতে চেয়েছেন। কবি অসীম সাহা স্ট্যাটাসে যেসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সেসব প্রশ্ন ও উত্তর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:
ইফতেখার আহমেদ বাবু: অনেক কবি গেছে শুনলাম, আপনাকে দাওয়াত কার্ড দেয়নি ?
অসীম সাহা: না বাবু। আগে পেতাম। তিনি.......যাবার পর আর পাই না!
অলক কুমার মিত্র: আপনি ইফতারে যাবেন কেন? আপনি কী রোজা রাখেন? হা হা
অসীম সাহা: ঠিক বলেছো! কিন্তু ইফতারের সময় ছাড়াও যে নিষিদ্ধ, তার কী হবে?
শিশির ভদ্র: নিষিদ্ধ আপনাকে কেউ করেছে নাকি নিজেকে নিজেই নিষিদ্ধ করে রেখেছেন? অসীম সাহা: নেত্রী আমার সহপাঠী।আমি তার কাছ থেকে নিজেকে নিজে নিষিদ্ধ করতে পারি শিশির?
শিশির ভদ্র: হ্যাঁ পারেন। এর আগে, সম্ভবত গতবছর আপনি আমন্ত্রণ রক্ষা করেননি। অন্যান্য সুবিধাবাদী চাটুকার আর ধান্ধাবাজদের সংমিশ্রণে নিজেকে দেখতে চাননি। নীতিপ্রবল ব্যক্তিত্বের একরকম আত্মাভিমান থাকে।
অসীম সাহা: আমি কি অসুস্থ থাকলেও আমন্ত্রণ রক্ষা করতে হবে? আমি একবারও না গেলেও ২১শে পদকপ্রাপ্ত কবি হিসেবে এটা আমার নিয়মিত প্রাপ্য। আমি চাটুকার হতে পারবো না। তাতে যদি জীবনে ডাক নাও পাই, তা হলেও কখনো মাথা নতো করবো না!
মোমেনা আক্তার লিপি: আপনি জাননা, আমি জানি আপনার জন্য কোন নিষিদ্ধ বলে কিছু নাই দাদা
অসীম সাহা: আমি আমন্ত্রিত না হলে কেন যাবো? আমি কি আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে যাবো? মরে গেলেও না!
মোমেনা আক্তার লিপি: ঠিক আছে আপনার জন্য আমি কথা বলবো কেন আপনি আমন্ত্রিত পেলেন না
অসীম সাহা: না! আমি জানি, কার জন্যে পাইনি!
মোমেনা আক্তার লিপি: খুবি দুঃজনক দাদা এই ভাবে কে সরে আসবো
অসীম সাহা: আমি কাঙাল বা ভিখিরি নই। যারা ষড়যন্ত্র করে আমার গণভবনে যাওয়ার পথ বন্ধ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেই তা খুঁজে বের করতে হবে!
আবু সালেহ: অসীম, এতো ছোট বিষয় নিয়ে ভাবিস কেনো। তুই কবি। তোর মর্যাদা আলাদা। দাওয়াত পত্র সরবরাহে ত্রুটি থাকতে পারে। এক সময় বৌদিকে আমার বাসায় চলে আয়।ভালো লাগবে।
অসীম সাহা: দোস্ত, বিষয়টা মোটেই ছোট নয়। গণভবনে আমার যাওয়া ঠেকানোর সাহস কার? সেটাই শুধু বলার!
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবি অসীম সাহা পূর্বপশ্চিমকে বলেন, একুশে পদক পাওয়ার আগে আমি গণভবনে নিয়মিত আমন্ত্রণ পেতাম। এখন আর পাই না। কোনো এক ব্যক্তির কারসাজিতে আমি আমন্ত্রণপত্র থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তবে তার নাম প্রকাশ করতে রাজি নন তিনি।
কবি অসীম সাহার জন্ম ১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। এ বছরের শুরুর দিকে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও লাভ করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৫১টি ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন