সোনাগাজীর নবগঠিত নুসরাত ফাউন্ডেশনের নামে প্রকাশিত একটি স্মরণিকা জব্দ করেছে ফেনী থানা পুলিশ। এই প্রকাশনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দৈনিক ‘সংগ্রাম’র সোনাগাজী উপজেলা প্রতিনিধি ও সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাহমুদুল হাসানকে সোমবার দুপুরে আটক করে।
পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে নুসরাতের মা-ভাই ও ফেনীর সাংবাদিরা দাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি সোনাগাজীর নুসরাত ফাউন্ডেশনের নামে আর্ট পেপারে চার রঙের প্রচ্ছদে ও অফসেট কাগজে প্রকাশিত স্মরণিকা কে বা কারা বিভিন্ন স্থানে বিলি করেন। ফেনীর ট্রাংক রোডের সবুজ আর্ট প্রেস থেকে ৭৬ পৃষ্ঠার স্মরণিকা প্রকাশিত হয়।
এতে নুসরাত হত্যার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট ছবি প্রকাশিত হয়। এতে দৈনিক ‘নয়া দিগন্ত’ ও দৈনিক ‘সংগ্রাম’ সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত বেশ কিছু প্রতিবেদনের কপি স্থান পায়।
নুসরাত হত্যার পর তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের দায়ের করা মামলার কপিও সেখানে ছেপে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কাগজে প্রকাশিত কলাম ও ছবি এতে স্থান পায়।
পুলিশ জানায়, সোমবার দুপুরে কতিপয় ব্যক্তি সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও স্থানীয় সাংবাদিক মাহমুদুল হাসানকে ফেনী মডেল থানায় নিয়ে যায়। এর আগে হাসান নুসরাত ফাউন্ডেশন এর নামে প্রকাশিত স্মরণিকাটি ফেনী বাজারে বিলি করছিলেন বলে ওই ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন।
ঘটনাটি তাৎক্ষণিক তদন্তের স্বার্থে হাসানকে ফেনী মডেল থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে বিকেলে ও সন্ধ্যায় স্থানীয় সাংবাদিকরা সেখানে যান। রাত সাড়ে আটটার দিকে নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার ও ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হানও থানায় যান।
এ সময় ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে বিতর্কিত প্রকাশনার দু শ’ কপি ফেনী মডেল থানার নিয়ে আসা হয় এবং এগুলো জব্দ করা হয়। পরে নুসরাতের পরিবার ও ফেনীর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের অনুরোধে রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসানকে ছেড়ে দেয়া হয়।
হাসান দৈনিক সংগ্রামের সোনাগাজী প্রতিনিধি ও ফেনী থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ফেনীবার্তার উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করে থাকেন।
ফেনী মডেল থানায় সোমবার রাতে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে হাসান বলেন, এই প্রকাশনাটি নুসরাতের পরিবারের নিবিড় তত্ত্বাবধানে হয়েছে। তাদের অনুরোধেই তিনি প্রকাশনার কিছু দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি জানান, এর নেপথ্যে রয়েছেন নুসরাত ফাউন্ডেশনের সভাপতি আমিনুর রশিদ চৌধুরি মাসুদ ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান টিপু। এদের মধ্যে মাসুদ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকল্প পরিচালক এবং টিপু ব্যবসায়ী। এদের সমন্বয়ে সম্প্রতি সোনাগাজীতে নুসরাত ফাউন্ডেশন গঠিত হয় বলেও জানান হাসান।
এই প্রকাশনা বিলি-বণ্টনের কোন দায়িত্বে তিনি ছিলেন না বলেও জানান। ফাউন্ডেশনের নেতারা এর বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সোমবার রাতে ফেনী মডেল থানায় বসে নুসরাতের মা বলেন, সাংবাদিক হাসান আমাদের আত্মীয়। তাই এই প্রকাশনাটি দেখাশোনার দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কাগজে প্রকাশিত লেখাগুলো এক জায়গায় নিয়ে আসতে এর উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে রবিবার জেলা প্রশাসনের ইফতারের আগে কে বা কারা ওই বই বিলি করেছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।
ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই প্রকাশনায় বিভিন্ন কাগজে পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব সত্য-অসত্য তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তার সবগুলোই সন্নিবেশিত হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। কোন পক্ষ তার অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে এমনটা করে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, কেউ কেউ প্রচার করেছেন পুলিশ হাসানকে আটক করে থানায় এনেছে। আসলে আমরা তাকে নিয়ে আসিনি। স্থানীয় কয়েকজন জনতা তাকে নিয়ে আসে। তাকে আনার পর কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও ওসির কক্ষে অপেক্ষমাণ হিসেবে রাখা হয়।
তিনি বলেন, এখনো নুসরাতের মামলার তদন্ত শেষ হয়নি, আদালতে অভিযোগপত্রও জমা পড়েনি। এমন সময় এ ধরনের প্রকাশনা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে বইগুলো আমরা রেখে দিয়েছি এবং হাসানকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নুসরাত স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু বলেন, আমরা কোন খারাপ উদ্দেশ্যে এটা করিনি। পরিবারের উৎসাহে নিজেদের টাকায় করেছি। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হবে জানলে করতাম না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন