মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে প্রেমিক ও তিন বন্ধু মিলে স্বপ্না টপ্য নামের এক আদিবাসী স্কুলছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। লজ্জা ও ক্ষোভে আত্মহত্যা করে মেয়েটি।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বৈরাতি মির্জাপুর খোর্দ্দ নুরপুর গ্রামের আদিবাসী পল্লীতে ঘটেছে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি।
গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও ৫ দিন পর মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে কথিত প্রেমিক রতনসহ ৩ জনকে আসামি করে ধর্ষণ এবং আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। তবে, কোনো আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দ নুরপুর গ্রামের ওই আদিবাসী পল্লীতে মঙ্গলবার সরেজিমেন গিয়ে জানা গেছে, জীতেন টপ্য’র একমাত্র মেয়ে স্বপ্না টপ্য স্থানীয় ইমাদপুর পশ্চিমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। গত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল।
তার সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা জানায়, রংপুর শহরের মাহিগঞ্জ এলাকার ঢোলভাঙা গ্রামের বুধুয়া মিনজির ছেলে রতন মিনজির সাথে স্বপ্নার প্রেমের সর্ম্পক ছিল। ১৮ এপ্রিল মোবাইল ফোনে দেখা করতে ডাকে রতন। ওই দিন বিকেলে চাচাতো বোনকে সাথে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয় স্বপ্না। এরপর সরাসরি প্রেমিকের সাথে দেখা করতে ঢোলভাঙা গ্রামে যায় সে। সেখানে রতন ও তার তিন বন্ধু একটি নির্জনস্থানে নিয়ে স্বপ্না এবং চাচাতো বোনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরদিন শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় স্বপ্না ও তার বোন বাড়ি ফিরে। তখন তারা অসুস্থ্য থাকলেও ঘটনাটি কাউকে জানায়নি। এরপর লজ্জা এবং ক্ষোভে বিকেল ৫টায় স্বপ্না টপ্য শোয়ার ঘরে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
তার প্রতিবেশী ছোটবোন ৮ম শ্রেণির ছাত্রী লিমা টপ্য, ১০ শ্রেণির ছাত্রী কল্পনা মিনজি ও চামেলী টপ্য বলেন, ‘অনেক দিন ধরে রতন মোবাইল ফোনে স্বপ্না দিদিকে বিরক্ত করত। প্রেমের প্রস্তাব দিতো। কিন্তু দিদি তাতে রাজি হয়নি। পরে নানা কৌশলে প্রেমের ফাঁদে পড়ে যায়। এরপর থেকে তারা মোবাইলে এসএমএসে নিয়মিত কথা বলত। কিন্তু এভাবে যে দিদিকে হারাবো, তা কখনও ভাবিনি।’
তারা আরও বলেন, ‘রতন আমদের দিদিকে ডেকে নিয়ে খারাপ কাজ করেছে। তার সাথে যে বোনটি ছিল তাকেও লম্পটেরা নষ্ট করেছে। লজ্জায় স্বপ্না দিদি আত্মহত্যা করেছে। আমার রতনের ফাঁসি চাই।’
বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্বপ্নার মা সীতা কুজুর। মেয়ের কবরের পাশে ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে আছেন। অস্পষ্ট কণ্ঠে বললেন, ‘বুকের ধন এটেকোনা শুয়ে আছে। যারা মোর বুকের ধন কোনাক নষ্ট করি ফেলাইলো, তামার ঘরে বিচার চাঁও।’ বাবা জীতেন টপ্যও জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েছেন।
ধর্ষণের শিকার অপর স্কুলছাত্রীর মা, প্রতিবেশী পঞ্চ মিনজিসহ অনেকেই বলেন, ‘ধর্ষক পক্ষ হুমকি দিচ্ছে-স্বপ্না তো আত্মহত্যা করেছে, এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিলে ধর্ষণ হওয়া অন্যজনকে মেরে ফেলা হবে।’ এই ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। ধর্ষণের মামলাও করেনি।
ঘটনার পাঁচ দিন পর স্বপ্নার বোন পরিতা টপ্য বাদী হয়ে কথিত প্রেমিক রতনসহ ৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রউফ মাষ্টার বলেন, ‘কেউ ধর্ষণ হওয়ার বিষয়টি আমাকে জানায়নি।’
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর আলী বিশ্বাস বলেন, ‘আদিবাসী স্কুলছাত্রী স্বপ্না আত্মহত্যার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার সাথে কথা বলেছি। ওই সময় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তারপরও লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেম করা হয়েছে। তবে, ধর্ষণের বিষয়টি জানার পর স্বপ্নার স্বজনকে ডেকে এনে মামলা নেয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন