আগামীতে ঋণখেলাপির মৃত্যু হলে খেলাপি ঋণের দায়ভার তার উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশদেরই বহন করতে হবে। ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য বিদ্যমান অর্থঋণ আদালত আইন পরিবর্তনের বিষয়ে এ সুপারিশ করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ২৩ পৃষ্ঠার এই সুপারিশের ওপর মতামত দেয়ার জন্য তা গেল সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পেলে আইনটি সংশোধনীর বিষয়ে অনুমোদন নেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। চলতি মাসেই এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া যেতে পারে। এরপর তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এই সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাঠানো হবে।
সংশোধনীর সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, ২৫ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের মামলা ফাস্ট ট্র্যাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়েরের পর সে আইনের অধীনে মেডিয়েশনের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা প্রায় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, মামলা দায়েরের আগেই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি অধিকতর কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে বড় অংকের ঋণগ্রহীতা অর্থাৎ ৫ কোটি টাকার বেশি স্থিতিসম্পন্ন ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আগে নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানের তদারকিতে পেশাদার মেডিয়েটরদের নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে মেডিয়েশনের প্রচেষ্টা এবং তৎপরতা চালানো বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। পাশাপাশি যেসব দেওয়ানি মামলা (যার মূল্য ২৫ কোটি টাকার কম) মামলা পূর্ববর্তী মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়নি তা নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানের তদারকির মাধ্যমে পেশাদার আরবিট্রেটর নিয়োগ করে নিষ্পত্তির জন্য বাধ্যতামূলকভাবে পাঠানো যেতে পারে। এসব আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া ফাস্ট ট্র্যাক সোল আরবিট্রেটরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। আর নিষ্পত্তির জন্য একটা যৌক্তিক সময়সীমা বেঁধে দেয়া যেতে পারে। একইভাবে ২৫ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের মামলা ফাস্ট ট্র্যাকের আওতায় আদালতের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান করা যেতে পারে উল্লেখ করে অর্থঋণ আদালত আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা পরিবর্তন প্রয়োজন।
এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালকে প্রধান করে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দশ সদস্যের কমিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন। এ কমিটি আইনগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছে। সমস্যা সমাধানের জন্য তারা সুপারিশ তৈরি করছে। সেই সঙ্গে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কিছু ধারা সংযোজনের সুপারিশ করবে।
সূত্র জানায়, ঋণের গুণগত মান বৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ কমাতে কমিটি ব্যাংক কোম্পানি আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, অর্থঋণ আদালত আইন ও দেউলিয়াবিষয়ক আইনের বিষয়ে বেশকিছু সুপারিশ তৈরি করেছে। এগুলোর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের নীতিমালা আরও কঠোর করা হচ্ছে। অর্থঋণ আদালত আইন ও দেউলিয়াবিষয়ক আইনের কিছু ধারা সংশোধন করে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে ব্যাংককে সর্বাত্মক চেষ্টা করার বিধান করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মামলায় গ্রাহকের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে রায় হলে এর বিরুদ্ধে আপিল করতে খেলাপি ঋণের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। তবে এ হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ করার পক্ষে কমিটির কয়েক সদস্য। ক্ষুদ্রঋণ ছাড়া অন্য কোনো ঋণ যাতে কোনো গ্রাহক পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া নিতে না পারে, সে বিষয়েও নতুন বিধান সংযোজন করা হবে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে শাখা পর্যায় থেকে আঞ্চলিক ও প্রধান কার্যালয় পর্যন্ত দায়-দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। ঋণখেলাপি হলে সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন