দিন ফিরেছে চা শিল্পে। গত মৌসুমের মতো এবারও রেকর্ড উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের চা আবারও বিশ্ববাজার দখলে করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশের ১৬৬টি বাগানে ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ৮৯ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়।
এর আগে ২০১৬ সালে ১৫০ বছরের চায়ের ইতিহাসে প্রথম সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল।
১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে প্রথম বাণিজ্যিকভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সে সময়ে চা বিদেশে রফতানি করা হতো। এক পর্যায়ে চা রফতানি পণ্যের দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে।
কিন্তু, এক সময় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজার থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশের চা। শূন্যের কোটায় নেমে আসে রফতানি।
কিন্তু, ২০১৫ সালে মাত্র দশমিক ৪৯ মিলিয়ন কেজি চা রফতানি করে বাংলাদেশ। এরপরই চা শিল্পকে চাঙ্গা করতে মহাপরিকল্পনা নেয় সরকার। ‘চা শিল্পের উন্নয়নে পথ নকশা’ নামে একটি কর্মকৌশল তৈরি করে।
১৫ বছর মেয়াদী এই পথ নকশায় চায়ের উৎপাদন ১৩২ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে কমপক্ষে ২৫ হাজার মিলিয়ন কেজি চা বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশে ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান জিএম শিবলী পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বাগান মালিকেরা পুরনো চা গাছ তুলে নতুন চারা লাগাচ্ছেন। একইভাবে নতুন করে চা চাষের পরিধিও বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য আশাব্যঞ্জক উৎপাদন বাড়ছে।
তিনি আরও জানান, সত্তরের দশকে চা উৎপাদন হতো ৩০ মিলিয়ন কেজি। চাহিদা ছিল মাত্র ৫ মিলিয়ন কেজি। ফলে বিপুল পরিমাণে রফতানি করা সম্ভব ছিল। এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ৮৫ মিলিয়ন হলেও উৎপাদন হচ্ছে ৮২ মিলিয়ন কেজি। তবে আশার কথা, অভ্যন্তরীণ চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আবার বিশ্ব চায়ের বাজার বাংলাদেশের দখলে আসবে।
উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে ফিনলে টি কোম্পানির ডিজিএম জিএম শিবলী বলেন, ‘চলতি বছর সময় মতো বৃষ্টি হয়েছে। সামনের মাসগুলোতেও এমন বৃষ্টি থাকলে, রেকর্ড চা উৎপাদন হবে।’
এম আর খাঁন চা বাগানের মালিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, চা শিল্পে আবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে। উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকলে আবার রফতানি করা সম্ভব হবে।
এম রহমান টি ল্যান্ড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর চায়ের ভাল মূল্য ছিল। এবারও এমন হলে চা বাগানের উন্নয়ন কাজ করতে সুবিধা হবে। চায়ের মূল্যে সন্তোষজনক হলে প্রফিট মার্জিন ভালো থাকে।’
নতুন চারা বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর চা বোর্ডের মেন্ডেটরি হচ্ছে ২.৫ পারসেন্ট। এটার পরও আমরা অতিরিক্ত করার চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমেদ জানান, পথ নকশার পথ ধরেই চা শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। বাগান মালিকেরা এখন চায়ের চারা রোপন বাড়াচ্ছেন। সঙ্গে চা চাষে আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বেশি হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন