যশোর সদর উপজেলার বিরামপুরে মন্দিরের ভেতর পুরোহিতের শিশু ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় বিব্রত সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ স্থানীয়রা। ধর্মীয় নেতার এমন আচরণে হতবাক সবাই। পুরোহিতের প্রতি মানুষের দীর্ঘদিনের আস্থা ও বিশ্বাস ধূলিসাৎ হয়েছে এ ঘটনায়। যা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসীও।
প্রায় সাড়ে তিনশ সনাতন ধর্মাবলম্বীর বাস বিরামপুর গ্রামে। এই গ্রামে পাঁচটি মন্দির রয়েছে। এর একটি ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎ সঙ্গ আশ্রম মন্দির। সেখানে মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমও আছে। এই মন্দিরের পুরোহিত প্রকাশ ব্যানার্জি। তার দ্বারা প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রী নিগৃহীতের ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
বিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা অনুপ রায় চৌধুরী বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মান-সম্মান ডুবিয়েছেন পুরোহিত। তার কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত। তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেও তাকে আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মীয় কাজে ডাকবে না। আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করেছেন তিনি। তার কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বিরামপুর-নওয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাপসী রায় বলেন, মেয়েটি আমাদের স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। দুদিন সে স্কুলে আসছে না। শুনেছি পুরোহিত তার সঙ্গে জঘন্য আচরণ করেছে। যা মুখে আনাও পাপ। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। আর কেউ যেন এমন ঘটনার শিকার না হয়।
শীলা রায় চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম দাস বলেন, মঙ্গলবার সকালে স্কুলে এসে শুনলাম পুরোহিত শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। পুরোহিতের এমন কাণ্ডে পুরো সমাজ বিব্রত। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তিনি দোষী হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
তিনি আরও বলেন, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ও বিশ্বাসের প্রতীক পুরোহিত। তার দ্বারা এমন জঘন্য ঘটনা মেনে নেয়া যায় না।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) সমীর কুমার সরকার বলেন, শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন পুরোহিত। শিশুটি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। আসামিকে আটক করা হয়েছে। বতর্মানে তিনি কারাগারে আছেন। বৃহস্পতিবার সকালে যশোর জেনারেল হাসপাতালে শিশুটির মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
দুই দশক আগে যশোরের বিরামপুরে অবস্থিত ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎ সংঘ মন্দিরে পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ পান প্রকাশ ব্যানার্জি। তিনি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের কালীপদ ব্যানার্জির ছেলে। সেই সময় বিশিষ্ট সমাজসেবক বিমল রায় চৌধুরী মন্দিরের পাশে দুই শতক জমি পুরোহিত প্রকাশ ব্যানার্জিকে বসবাসের জন্য লিখে দেন। তিনি সেখানেই বসবাস করতেন আর মন্দিরের পুরোহিতের কাজ করতেন। তার দুই সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে তিন মাস আগে। আর ছেলেটি নবম শ্রেণির ছাত্র। স্ত্রী-সন্তান নিয়েই সেখানে বসবাস করতেন প্রকাশ ব্যানার্জি।
প্রকাশ ব্যানার্জি আটকের পর তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রকাশ ব্যানার্জির শ্বশুর জানান, জামাইকে পুলিশ আটক করেছে। সে ঘটনায় জড়িত নাকি ফাঁসানো হয়েছে জানি না।
পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে পুরোহিত প্রকাশ ব্যানার্জি মন্দিরে পূজা অর্চনা করছিলেন। এ সময় শিশুরাও সেখানে উপস্থিত ছিল। একপর্যায়ে সাড়ে ছয় বছর বসয়ী ওই শিশুকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে ভেতরের একটি কক্ষে ডেকে নেন তিনি। সেখানে শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। শিশুটি চিৎকার করলে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে প্রকাশ ব্যানার্জিকে মন্দির থেকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় বুধবার শিশুটির মা থানায় মামলা করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন