মেয়েটির কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ২ লাখ। আর দুবাইয়ের পতিতালয়ের মালিকের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ৬ লাখ। এর বিনিময়ে মেয়েটির জীবন একবারে বিপর্যস্ত হয়ে করে ফেলা হয়েছে। ঢাকা ট্রিবিউন
যারা বাংলাদেশি এই মেয়েটির জীবন ধ্বংস করে দিলো তারা দিব্যি মুক্তভাবে চলাফেরা করছে। কিন্তু ২৪ বছরের এই মেয়ে যেমন প্রতারনার শিকার হয়েছে, তেমনি উপর্যপুরি ধর্ষণের কবলে পড়েছে।
মেয়েটিকে চাকুরি দেয়ার নাম করে দুবাই পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। পাঠানো হয় দুবাইতেই। কথা ছিলো বেতন হবে অঢেল। কিন্তু তার পরিবর্তে মেয়েটিকে দুবাইয়ের একটি মিনি পতিতালয়ে বিক্রি করা হয়। সে দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ কনসুলেটের মাধ্যমে গত ডিসেম্বরে দেশে ফিরলেও তার মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি।
মেয়েটির ভাষ্য, ভারতীয় ও বাংলাদেশিরা মিলে ঐ পতিতালয়টি চালায়। সেখানে বর্তমানে আরো কিছু বাংলাদেশি মেয়ে অবস্থান করছে। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মেয়েরাও রয়েছে। কয়েকজন বাংলাদেশি ম্যানপাওয়ার এজেন্সি এই সব মেয়েদের সে দেশে পাচার করে থাকে।
প্রথমোক্ত মেয়েটি জানায়, সুফিয়া নামের এক নারী এই প্রতারক চক্রের প্রধান মোহসীনের কাছে তাকে পাঠায়। নয়াপল্টনে তার অফিস। মোহসীন আলী ঐ কোম্পানীর মালিক এবং সরকারি রেজিষ্ট্রিভুক্ত। সে মেয়েটিকে দুবাই পাঠাতে পারবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। মেয়েটি বলে, লোকটি আমাকে একটি কার্ড দিয়ে বলেন, তুমি তোমার মনস্থির করতে পারলে যোগাযোগ করো। অত:পর আমি তার সহযোগিতায় দুবাই যেতে মনস্থ করি।
মোহসীন মেয়েটিকে দু’মাসের মধ্যে দুবাই পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। সিদ্ধান্ত হয় মেয়েটিকে হাসপাতালের চাকুরি দেয়া হবে। এজন্য মেয়েটিকে ২ লাখ টাকা দিতে হবে বলেও সে মেয়েটিকে জানায়।
ওই বছরের পহেলা নভেম্বর মেয়েটি মোহসীনকে ৩০ হাজার এবং ১০ ডিসেম্বর ২ লাখ টাকার বাকীটা প্রদান করে। মেয়েটি জানায়, ওই অফিস থেকে তাকে কোন বিমানের কোন টিকেট বা কাগজপাতি দেয়া হয়নি। একদিন মোহসীন আমাকে শাহজাালাল বিমানবন্দরে নিয়ে যায় এবং একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তার নাম সুমি। অত:পর আমাকে টুরিষ্ট ভিসায় দুবাই পাঠায়।
ঢাকার মেয়েটি বলে, দুবাইয়ে বিমানবন্দরে ভারতীয় এক লোক নিজেকে আন্না বলে পরিচয় দেয়। অত:পর মেয়েটিকে যে বাড়িতে নেয়া হয় সেখানে বাঙালি মেয়ে কাজলসহ আরেকটি মেয়ে তার টাকা পয়সা, পাসপোর্ট এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরের দিন কাজল একটি ৬ তলা বাড়ির নীচ তলায় ঢাকার মেয়েটিকে নিয়ে গেলে সেখানে সে আরো ৬/৭ টি মেয়েকে দেখতে পায়। তারা বিভিন্ন দেশের এবং কাস্টমারের জন্য অপেক্ষারত। ঢাকার মেয়েটি ভয় পেয়ে বলে, এখানে হাসপাতাল কোথায়। তখন আন্না বলে, এটা একটা ক্ষুদে পতিতালয় এবং মোহসীনের কাছ থেকে তাকে ৬ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে। ঢাকার মেয়েটি বলে, ওখানে বাংলাদেশি তরুণের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে তাকে বাধ্য করা হয়। লোকটিকে সে তাকে রক্ষা এবং বোনের ফোন নাম্বার দিতে চেয়েও লাভ হয়নি। ঢাকার মেয়েটি বলে, পরের দিন তাকে মাদক নিতে বাধ্য করা হয় এবং বেশ কয়েকজন লোক তাকে ধর্ষণ করে। আমার প্রথম খদ্দের কয়েকদিনের মাথায় একজন লোক নিয়ে আমার কাছে আসে এবং তিনি কনসুলেটের লোক ছিলেন। তখন আমি বাংলাদেশে আমার বোনের সঙ্গে কথা বলি।
ঢাকার মেয়েটির বাবা ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর পল্টন থানায় এ ব্যাপারে মামলা করেন। দেশে ফিরে মেয়েটি ম্যাজিস্ট্রেটকে বিস্তারিত জানিয়ে রেকর্ড করেছে। ভিকটিমের বাবা জানান, মোহসীনকে আমরা আমাদের মেয়েকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনতে হাতে পায়ে ধরলেও সে কোন কর্ণপাত করেনি।
দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনসুলেট অত:পর এই পতিতালয়ে হানা দিয়ে বাংলাদেশি মেয়েদের উদ্ধার করে। অত:পর ১৭ ডিসেম্বর তাদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ঢাকার মেয়েটির বাবা মোহসীনের সঙ্গে মঈনউদ্দিন নামের একজন লোকের যোগসাজশের কথা জানায়।
বাংলাদেশে ফেরার আগে ঢাকার মেয়েটি দুবাই কনসুলেটে যে অভিযোগ দায়ের করে তারা তা আইজিপিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
মেয়েটি ঢাকায় ফিরে যখন পুলিশে অভিযোগ করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তাতে বলা হয়, তার ওপর নানা চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তার পরিবারকে হুমকি এবং টাকা দিতে চাচ্ছে। ২৭ জানুয়ারি ঢাকার শান্তিনগরে তাকে মামলা তুলে নিতে ভয় দেখানো হয়।
এদিকে, মামলা তুলে নিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। ৪ মার্চ এ লক্ষে একটি চুক্তি হয়। ঢাকার আদালতে শুনানি হলে মোহসীন ও মইনউদ্দিন আত্মসমর্পন করে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পল্টন থানার আলমগীর বলেন, পুলিশ ভিকটিমকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠিয়েছে। অনেকবার ধর্ষিত হওয়ার সার্টিফিকেট দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মোহসীন বলেছেন, মানব পাচারের সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, পুলিশ আমাকে নির্দোষ প্রতিপন্ন করেছেন। আমি আমার এজেন্সী চালাচ্ছি।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন