স্ত্রী ও সন্তানের চোখের সামনে পৈশাচিকভাবে বিলাইছড়ি আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশের প্রাণ কেড়ে নেয় ঘাতকরা। পায়ে ধরে ঘাতকদের কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন সুরেশের স্ত্রী।
কিন্তু তাতে মায়া তো দূরের কথা আরও নিষ্ঠুর হয়ে তাকে লাথি মেরে বোট থেকে পানিতে ফেলে দেয় এবং সুরেশকে নামায় দুর্বৃত্তরা। এরপর স্ত্রী-সন্তানের সামনে মাথায় ও বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে সুরেশের প্রাণ নিয়েছে।
সেদিনের নির্মম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এসব কথা বলেন বিলাইছড়ি আওয়ামী লীগের সভাপতি নিহত সুরেশ কুমার তঞ্চঙ্গ্যার একমাত্র ছেলে নিরুপম তঞ্চঙ্গ্যা। যিনি ছিলেন ঘটনার চাক্ষুষদর্শী।
১৯ মার্চ সকালে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির কাপ্তাই লেকে বোট থামিয়ে সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে সামনাসামনি নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে হত্যা করে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা।
১৮ মার্চ বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে পরদিন উপজেলার ফারুয়ার ওরাছড়ির নিজ বাড়ি থেকে ইঞ্জিনবোটে সদরে যাচ্ছিলেন সুরেশ। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ও ছেলে নিরুপম।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিরুপম বলেন, বিলাইছড়ি উপজেলার দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যার নির্বাচন শেষ করে পরদিন সকালে একটি ইঞ্জিনচালিত বোটে আমরা সপরিবারে বিলাইছড়ি সদরে ফিরছিলাম। পথে সকাল ৯টার দিকে উপজেলার আলিক্ষ্যং এলাকায় পৌঁছলে চালককে আমাদের বোট থামানোর নির্দেশ দেয় অস্ত্রধারীরা। এতে বোট থামাতে বাধ্য হন চালক। ওই সময় বাবা চালককে বোট থামানোর কারণ জানতে চান। তখন কাপ্তাই লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা তিন সশস্ত্র অস্ত্রধারীকে দেখিয়ে দেন। বাবা চালককে বলেছিলেন বোট না থামাতে। কিন্তু না থামালে গুলি করে বোট ডুবিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় অস্ত্রধারীরা। ফলে চালক বাধ্য হয়ে বোট ভেড়ান তীরে। এতে সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে অস্ত্রের মুখে জোর করে বোট থেকে নামিয়ে নিচ্ছিল বন্দুকধারীরা। মা তখন তাদের পায়ে ধরে বাবার প্রাণভিক্ষা চান। তখন মাকে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয় ঘাতকরা। তাৎক্ষণিক সামনাসামনি বুকে এবং মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে বাবাকে হত্যা করে চলে যায় তারা। এরপর আমরা ফোন করে সবাইকে খবরটি জানাই।
নিরূপম তঞ্চঙ্গ্যা তার বাবার হত্যাকাণ্ডে জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে জানান, তার বাবার অপরাধ শুধু আওয়ামী লীগ করেন বলে। জেএসএস প্রার্থীর বিপক্ষে এবং নিজ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কারণেই তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। বাবার হত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এভাবে নির্মমতার শিকার সব হত্যার বিচার চান নিরুপম। ঘটনার জন্য একই অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর বলেন, সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা হত্যাকাণ্ডে জনসংহতি সমিতি জড়িত।
এদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার সম্পাদক নীলোৎপল খীসা। বলেছেন, আমরা এ ধরনের রাজনীতির চর্চা করি না। এসব ঘটনায় আমাদের জড়ানোর চেষ্টা স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন-উদ্দেশ্য। ঘটনার চার দিনের মাথায় ২৩ মার্চ এ নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিলাইছড়ি থানার ওসি পারভেজ আলী জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা হত্যাকাণ্ডে শনিবার একটি মামলা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) স্থানীয় সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শুভমঙ্গল চাকমাকে প্রধান আসামি করে ২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের ১২ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। আট জনকে অজ্ঞাত আসামি দেয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে তল্লাশি অভিযান চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন