বা থেকে: চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, জাফর আহমদ, নুরুল আলম
কক্সবাজারের টেকনাফে রবিবার (২৪ মার্চ) অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীদের প্রায় সবাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। প্রার্থীদের দাবি, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে তাদের নামে ‘ইয়াবা ব্যবসায়ীর’ তকমা লাগানো হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাফর আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার শীর্ষে তার নাম।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আলমের নাম রয়েছে ইয়াবা কারবারিদের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকারী হিসেবে।
নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর নাম ইয়াবা কারবারির তালিকায় নেই। তবে তার দুই ছেলে দুই ছেলে রাশেদ মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব মোর্শেদের নাম রয়েছে তালিকায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এই তিন প্রার্থীর সঙ্গে সমন্বয় করে যেকোনও একজনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করতে চেয়েছিলেন ইয়াবা গডফাদার ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। কিন্তু মধ্যস্থতায় সফল হতে পারেননি তিনি। এ ব্যাপারে জানতে বদির মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ গঠিত। এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮০৮ জন। চেয়ারম্যান পদে তিন ইয়াবা ব্যবসায়ী ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাধারণ ভোটাররা জানান, ইয়াবামুক্ত টেকনাফ গড়তে ক্লিন ইমেজের নেতা দরকার। কিন্তু সেই নেতা বা প্রার্থী টেকনাফে নেই। চেয়ারম্যান পদে যে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা সবাই ইয়াবা ব্যবসায়ী। ভোটারদের বাধ্য হয়েই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ভোট দিতে হবে নয়তো ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্য, অনেকেই ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোনও বদনাম নেই। আমি দীর্ঘ সময় ধরে ইয়াবা ও মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছি। কিন্তু এক শ্রেণির ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আমার ইমেজ ধ্বংস করতে আমাকে না পেরে আমার দুই ছেলেকে ইয়াবার তালিকায় নাম লেখিয়েছে। আমার ছেলেরা ইয়াবা ব্যবসায়ী নাকি ইয়াবাবিরোধী সেটি প্রশাসন ভাল জানে।’
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আজকের নির্বাচনে আমি অবশ্যই জয়লাভ করবো। কারণ আমার এলাকার ভোটাররা আমাকে ভালভাবে জানেন এবং চেনেন। আমার ইউনিয়ন হ্নীলা হলেও পার্শ্ববর্তী হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ভোটাররা একচেটিয়া ভোট আমাকে দেবেন। আমার দুই ইউনিয়নে ৫৪ হাজার ভোটার রয়েছে। এছাড়াও নৌকা দলীয় প্রতীক হওয়ায় উপজেলার বাকি চারটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকেও আমাকে ভোট দিবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’
মোটরসাইকেল প্রার্থী নুরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্বাচনি কাজে ঝামেলায় থাকায় কথা বলা সম্ভব নয় বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।
আরেক প্রার্থী জাফর আহমদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে ইয়াবা ডন বানানোর বিষয়টি মানহানিকর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমি ওই তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। কারণ, ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে এই পর্যন্ত কোনও থানায় আমার নামে মামলা নেই। এ কারণে আমি গতবারেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি এবং এবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবো। টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মানুষের কাছে আমিই জনপ্রিয়। এই ইউনিয়নের ১৮ হাজার মানুষ আমার কর্মী হয়ে লড়ছেন।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনও পক্ষকে বিন্দু পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করতে সুযোগ দেওয়া হবে না। ভোটারবান্ধব পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে কোনও ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা, সন্ত্রাস এবং পরিবেশকে অশান্ত করতে চাইলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন