কুমিল্লায় বিদ্রোহী প্রার্থীর ‘সশস্ত্র’ প্রচারণা, আতঙ্ক
আতঙ্কের জনপদ হিসেবে পরিচিত কুমিল্লার তিতাস। এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী পারভেজ হোসেন সরকার।
হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, কালো চশমায় ঢাকা চোখ, গলায় ঝুলানো বাঁশিতে অনবরত ফুঁক দিতে থাকা এসব রক্ষী নিয়েই তিনি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। আনারস প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
হঠাৎ হঠাৎ বিভিন্ন এলাকায় এভাবে নির্বাচনী মহড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
যদিও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সহিংসতার জের ধরে দীর্ঘ ২২ মাস পর এলাকায় ফেরা পারভেজ সরকার দাবি করেছেন, ‘প্রতিপক্ষের অব্যাহত হুমকি-ধমকির কারণেই নিরাপত্তার জন্য এই ব্যবস্থা করছেন। প্রশাসনের অনুমোদনও নেয়া আছে।’
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পারভেজ হোসেন সরকার তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ২০০৯ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধারে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি।
এবারের নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সোহেল সিকদার। ২০১৪ সালে তিনি ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আগামী ৩১ মার্চ তিতাসসহ কুমিল্লার ১৩ উপজেলা পরিষদে ভোট হওয়ার কথা। যদিও ৫ উপজেলার পূর্ণাঙ্গ প্যানেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ওইদিন ৮টি উপজেলায় ভোট হবে।
এই নির্বাচনে সোহেল সিকদার ও পারভেজ সরকারের প্রার্থিতায় ভোটের মাঠে যোগ হয়েছে বাড়তি আমেজ। বিরামহীন প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটছে দু’জনেরই।
নির্বাচনের বাইরেও এই দুই নেতা রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মাঝে বেশ কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছে। সর্বশেষে ২০১৭ সালের ১১ মে এমন সংঘর্ষের জের ধরেই এলাকাছাড়া হন পারভেজ সরকার।
অন্যদিকে, তিতাসের জিয়ারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন সরকার হত্যা মামলায় নৌকার প্রার্থী সোহেল সিকদারকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
জানা গেছে, পারভেজ হোসেন সরকার ২০০৯ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করলেও পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান বিএনপির প্রার্থীর কাছে।
এবারো তিনি দলের সমর্থন চাইলেও শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সোহেল সিকদার।
সশস্ত্র দেহরক্ষী ও বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে প্রচারণার বিষয়ে পারভেজ হোসেন সরকার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘দুই বছর পর ফিরে দেখি, আমার রেখে যাওয়া তিতাস আগের মতো নেই। পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে, গড়ে উঠেছে মাদকের সিন্ডিকেট। তাই দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফেরায় নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার এবং চার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই পুলিশ-র্যা ব ও উপজেলা প্রশাসন আমাকে সহযোগিতা করছে। নিরাপত্তারক্ষীদের বিষয়টিও থানায় লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’
তিতাস থানার ওসি সৈয়দ আহসানুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘তিতাসের নির্বাচনী মাঠ এখনো পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আছে। তারপরও দুই প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষের শঙ্কায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কায়জার মোহাম্মদ ফারাবি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে রয়েছেন। তারপরও প্রার্থীদের কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিত আকারে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কমিশন বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট রাখতে নির্বাচনী আচরণবিধি যেন কেউ লঙ্ঘন না করতে পারে, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। সকল প্রার্থী সমান সুযোগ পাবে।’
তিনি বলেন, ‘ভোটাররা নিরাপদে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন, এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে প্রশাসন।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন