চট্টগ্রামের কর্ণফুলির ইছানগরের রহস্যঘেরা আলিশান বাড়ির খোঁজ পেয়েছে প্রশাসন। তবে ওই দুই বাড়ির কোনো মালিকের দেখা মিলছে না। দু’ভবনের ভাড়িটাটিয়াদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে বাসা ছেড়ে যাওয়ার জন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাশাপাশি ওই দুই ভবনের মালিকরা দুজনই সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। কক্সবাজারের হ্নীলার এ দুই ব্যাক্তি প্রায় ৩০ শতক জমির উপর বিশাল বাউন্ডারি ওয়ালে ঘেরা দুটি বহুতল ভবন গড়ে তোলেন। এরমধ্যে একটি ৫ তলা ও অপরটি ৪ তলা বিশিষ্ট।
পাঁচতলা বাড়িটির মালিক হেলাল উদ্দিন (৪৫)। যার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় ইয়াবা ও মাদক মামলা কারবারির ঘটনায় ৪০টি মামলার সন্ধান পেয়েছে প্রশাসন। আর চারতলা বাড়িটির মালিক মোহাম্মদ হোসাইন (৪০)। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে মাদক কারবারিসহ নানা অভিযোগ।
আগেরদিন বিকেলে (মঙ্গলবার) কর্ণফুলি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ ওই দুই বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। বাড়ি দু’টিতে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি সিসিটিভি ক্যামেরা জব্ধ করেছেন।
কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাসান ইমাম, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. দিদার হোসেন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলম খাঁন অভিযানটিতে অংশ নেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, এই দুইটি ভবনের অনেক কিছুই রহস্যাবৃত। বাড়ির মালিকেরা পলাতক। দুইটি ভবনের প্রবেশ দ্বারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা পাওয়া জব্দ করা হয়েছে।
ধারণা হচ্ছে, এসব ক্যামেরার মাধ্যমে তারা দূরে কোথাও বসে এলাকার লোকজনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করত। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ভাড়াটিয়াদের বাড়ি খালি করে দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশের সাথে আলাপকালে জানাগেছে, চিহ্নিত ভবন দুটির মালিক টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ হোসাইন (৪০)। দু’জনই ব্যবসায়িক অংশীদার। এর মধ্যে হেলালের বিরুদ্ধে কর্ণফুলি থানায় মাদক, অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১৪ টির মতো মামলা আছে। দেশের বিভিন্ন থানায় তার মামলার সংখ্যা ৪০ এর বেশি।
সর্বশেষ গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ১ লাখ ১৫ হাজার ইয়াবাসহ ফারুক আহমেদ নামের এক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়। তার মুখ থেকেও বেড়িয়ে আসে হেলালের কথা।
জানাগেছে, কয়েকদিন আগেও এ দু’বাড়িতে একবার অভিযান চারিয়েছে প্রশাসন। দেশে মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ার সাথে সাথে হেলাল ও হোসাইন মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে পালিয়ে যান। তাদের বৈধ ব্যবসার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মূলত মাদক ব্যবসার আয়ে এই রহস্যময় দুটি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।
অভিযানকালে দু’বাড়িতে ভাড়াটিয়াদের মধ্যে কিছু নারী ও শিশু সন্তান ছাড়া তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। মৌখিক ভাবে দু’ভবনের সকল ভাড়াটিয়াকে আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে বাসা ছাড়ার নিদের্শনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। অন্যথায় পর্যায়ক্রমে গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বন্ধ করা হবে বলে সর্তক করেন তাদের।
কর্ণফুলির চরপাথরঘাটা ইছানগর এলাকার বিএফডিসির ঠিক বিপরীতে ডায়মন্ড সড়কের বাঁ পাশে বানানো হয়েছে এ দুইটি আলিশান বাড়ি। দেখতে সুবিশাল রাজ প্রাসাদের মতোই। নীল রংয়ের পাঁচতলা বাড়িটির মালিক হেলাল। সোনালী রঙের চারতলা বাড়িটির মালিক হোসাইন। ইছানগরের মীর্জা বাড়ির হাফেজ আহমেদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমি ক্রয় অল্প সময়ের মধ্যে বাড়ি দুটি নির্মাণ করে এমনটাই জানালেন ওই এলাকার গ্রামবাসী।
অভিযোগ, রহস্যময় এ দুইটি প্রাসাদ তৈরির পর থেকেই এলাকায় মাদকের ভয়ালবিস্তার হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন