বিত্তবৈভবের লোভে পড়ে ওরা হারিয়ে ফেলেছিল মনুষ্য সত্তা। ধ্বংস করেছে দেশের তারুণ্যকে। অর্জন করেছে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ। এসব করতে গিয়ে অবশ্য হারিয়ে ফেলে নিজের স্বাভাবিক জীবনও। সমাজে সম্মানের বদলে অনেকটা হয়ে পড়ে ব্রাত্য। অবশেষে বোধোদয় হয়। আর তাই ফিরতে চায় সুন্দর সমাজে।
শতাধিক ইয়াবাকারবারি অপেক্ষা করছেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় থাকা এসব মাদককারবারির মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধিও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবাকারবারির নামও রয়েছে। এসব ইয়াবাকারবারির মাদক বিক্রির অর্থ অনুসন্ধান করে তা বাজেয়াপ্ত করবে সরকারও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে র্যাবের কাছে সুন্দরবন ও মহেশখালীর দস্যুরা আত্মসমর্পণ করেন। তবে এবারই প্রথমবারের মতো পুলিশের হাত ধরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে ইয়াবাকারবারিরা। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন তারা।
পুলিশ জানায়, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। মূলত এর পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পুলিশ প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নে হাত দেয়। ইয়াবার প্রবেশদ্বারখ্যাত কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ১৫০ জনের বেশি মাদককারবারি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। ইয়াবাকারবারি এবং পুলিশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে দায়িত্ব পালন করছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের চট্টগ্রাম অফিসের
প্রতিবেদক আকরাম হোসেন।
আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় থাকা মাদক কারবারিদের সংখ্যা ১০০ থেকে ১৪০ জনের মতো। তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এসব ইয়াবা কারবারির মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও চেয়ারম্যানও রয়েছেন। আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিদের অন্তত ৪০ জন এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছেন।
সূত্র জানায়, দস্যুদের আত্মসর্পণের চেয়ে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়াটি কিছুটা আলাদা হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্তৃপক্ষ আত্মসমর্পণ করা ইয়াবা কারবারিদের সম্পদের তদন্ত করবেন। তদন্তের পর ইয়াবা কারবারির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে সরকার। এ ক্ষেত্রে ইয়াবা কারবারিরা শুধু আত্মসমর্পণের কারণে বিচারিক ক্ষেত্রে সরকারের আইনি সুবিধা পাবেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের ৪ মে থেকে শুরু হওয়া বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজারের অনেক ইয়াবা কারবারি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করেন। এমনকি ইয়াবা মামলার আসামিরা জামিন নিয়েও বাড়ি ফিরতে চাইছেন না। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের কাছ থেকে সুবজ সংকেত পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছেন অনেক ইয়াবা কারবারি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাইছি না আমরা।
২০১৬ সালের ৩১ মে র্যাবের কাছে প্রথম আত্মসমপর্ণ করেন তৎকালীন সুন্দরবনের আতঙ্ক সবচেয়ে বড় দস্যু দল মাস্টার বাহিনী। এর পর একে-একে ৩২টি বাহিনীর ৩১৭ দস্যু আত্মসমর্পণ করেন। তারা ৪৯৮টি অস্ত্র ও ২৬ হাজার ৭৯০ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেন র্যাবের কাছে। সর্বশেষ কক্সবাজারের মহেশখালীতে দস্যুদের ৪৩ জন র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ করা এসব দস্যুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে র্যাব।
ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, খুব শিগগিরই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান করতে পারব বলে আমরা আশা করছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন