রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতার সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ভাতা পাবেন। সম্প্রতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের নিকট পাঠানো এক চিঠির মাধ্যমে এমন সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণলায় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এ প্রকল্পের ডিপিপিতে (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) বিভিন্ন পদে মোট ৩৬৯ জনবল নিয়োগের সংস্থান রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন পদে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন থেকে ৮৭ জনবল প্রকল্পে সংযুক্ত হয়ে বর্তমানে কর্মরত। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃক এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতাদির সঙ্গে ডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী ৫০ শতাংশ বিশেষ ভাতা দেয়ার জন্য পত্র মারফত অর্থ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেল বছর ৩০ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ এপ্রিল অর্থ বিভাগে এ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলকে বিশেষ ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ৩০ শতাংশ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। অন্যদিকে প্রকল্পে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া জনবল ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ ভাতা দেয়ার বিষয়টি অনুমোদিত ডিপিপিতে উল্লেখ না থাকায় সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত জনবল ছাড়া অন্য জনবলের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিশেষ ভাতা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি।
প্রকল্পে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া জনবল ছাড়া অন্যান্য জনবলের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাতা দেয়ার বিষয়টি অনুমোদিত ডিপিপিতে উল্লেখ না থাকায় প্রকল্পের সংযুক্তি বা প্রেষণে নিয়োজিত জনবলকে বিশেষ ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ দেয়ার বিষয়টি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনকে এ মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশন জানায় যে, যেহেতু বিষয়টি ‘রেভিনিউ ইন নেচার’ তাই অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে এর সমাধান করা যায়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বলছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি নতুন ও উচ্চ প্রযুক্তির ঘন প্রকল্প। এটি সুচারুভাবে বাস্তবায়নের জন্য পারমাণবিক প্রযুক্তির বিষয়ে পারদর্শী ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন। প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন থেকে বিশেষ মেধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী কর্মকর্তাদের প্রকল্পে সংযুক্ত করা হয়েছে। উজ্জ্বল শিক্ষাগত যোগ্যতার অধিকারী এসব কর্মকর্তা ইতোমধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ বা সভায় অংশগ্রহণ করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করেছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২৪ ঘণ্টা চলমান। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সপ্তাহে প্রায় সাতদিন সকাল থেকে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে।
প্রকল্পের কাজের ধরন বাংলাদেশের জন্য একেবারেই নতুন। এছাড়া এ বিষয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন জনবল নিতান্তই অপ্রতুল। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে এবং বিশেষায়িত জনবলকে প্রকল্প কাজে সম্পৃক্তের জন্য সরকারি বেতন কাঠামোর পাশাপাশি অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা দেয়া একান্ত প্রয়োজন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে প্রতিটি পর্যায়ের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পাদিত হচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের পক্ষে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরুর পর এত স্বল্প সময়ের মধ্যে দুটি ইউনিটের প্রথম কংক্রিটের ঢালাই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে প্রকল্পে নিয়োজিত জনবলের নিরলস পরিশ্রমের কারণে। তাদের নিরলস পরিশ্রম, একাগ্রতা ও অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিবেচনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সভা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়কের (এসডিজি) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভা এবং স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা ইউনিটের সংযুক্তি বা প্রেষণে কর্মরতদের (সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত) সরকারি বেতন কাঠামোর পাশাপাশি মূল বেতনের ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত বিশেষ ভাতা দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছর ৩০ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে ২০২২ সালে। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের দুটি ইউনিট থেকে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দিচ্ছে বাংলাদেশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন