‘আমার বাবা কী করে ওখানে, আমার বাবা ওখানে শুয়ে আছে কেন? ওরে আমি খুব কষ্ট করে মানুষ করছি রে, আমার বাবারে আমার কাছে দিয়া দাও রে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গের স্ট্রেচারে বুকের মানিক ছেলে সুজনের (১৮) নিথর মরদেহ দেখে এভাবেই আহাজারি করছিলেন মা সুলতানা আক্তার। শনিবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দু’টি পক্ষের সংঘর্ষের সময় পিকআপ ভ্যানের চাপায় নিহত হন সুজন।
ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েই পাগলের মতো ঢামেকে ছুটে আসেন সুলতানা। মর্গে সুজনের মরদেহ দেখেই করতে থাকেন গগণবিদারী আহাজারি।
সুজন ভোলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর গ্রামের রুহুল আমিন-সুলতানা আক্তার দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। আমিন-সুলতানা দম্পতি মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকার ১০ নম্বর রোডের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। সংসারের দায়িত্ব অনেকখানিই ঘাড়ে বইছিলেন রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করা সুজন।
সুজনের ছোট বোন সুরমা আক্তার মোহাম্মদপুরের একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। সে বাংলানিউজকে জানায়, তার ভাই সকালে নাস্তা না খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় যান। বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে যান, ‘বাড়িওয়ালা ভাড়া চাইলে বলবি ২০ তারিখে দেবো’।
সুলতানা আহাজারি করতে করতে জানান, তিনি বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। তার স্বামী লেবারের কাজ করেন। তাও অসুস্থ শরীরে। বড় ছেলে মানসিকভাবে দুর্বল। সুজনই চালাতেন সংসার। রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে সংসারের দায়িত্ব বেশি সামলাতেন তিনি।
মর্গের সামনে বসে বিলাপ করতে করতে সুলতানা বলেন, ‘আমার পোলার ইনকাম করার দরকার নাই। আমার পোলারে ফিরাইয়া দাও, আমি আমার পোলারে বইসা বইসা খাওয়ামু। আমার বাবা গেছে গা, আমিও আমার বাবার লগে যাইমু গিয়া…।’
আহাজারি করতে করতে সুলতানা যখন মূর্ছা যান, তখন তাকে বুকের কাছে আঁকড়ে ধরে ছোট্ট মেয়ে সুলতানা। এসময় মর্গের সামনে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বাংলানিউজকে জানান, ওই ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে প্রক্রিয়াধীন আছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন