বান্দরবানের স্থানীয় রাজনীতিতে দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিরই প্রভাব বেশি। এখানে জেএসএস ও ইউপিলডিএফ নামে দুটি শক্তিশালী পাহাড়ী সংগঠনও রয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনগুলো সক্রিয় হতে শুরু করেছে। তবে দেশের বড় দুটি দল বাংলাদেশের ৩০০ নম্বর আসনটির দখল নিতে বেশি সক্রিয় রয়েছে।
এদিকে চলমান অন্তর্কোন্দল নিয়ে বান্দরবান বিএনপি বেশ বেকায়দায় রয়েছে। এই সমস্যা না মেটালে তা নির্বাচনের ফলে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন নেতাকর্মীরা। এর আগের নির্বাচনগুলোতেও কোন্দলের কারণেই তাদের খারাপ ফল হয়েছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগেও কোন্দল দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। যা সামলে উঠে বান্দরবানের আসনের দখল টিকিয়ে রাখতে চায় দলটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠের রাজনীতিতে দলগুলোর নেতাকর্মীদের এখনও তেমন কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে। তাদের অনুসারীরাও অপেক্ষায় রয়েছেন নিজেদের পছন্দের প্রার্থী যেন মনোনয়ন পান। এরপরেই তারা মাঠে সক্রিয় হবেন বলে জানা গেছে।
বান্দরবানের সাধারণ ভোটাররা জানান- বিএনপির দু’গ্রুপের দীর্ঘদিনের গ্রুপিং কোন্দলের সুযোগেই এখানে আওয়ামী লীগ বার বার বিজয়ী হয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি বহিষ্কৃত কয়েকজন নেতা একত্রিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও গ্রুপিং কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছেন।
বান্দরবান আওয়ামী লীগের একসময়কার জেলা সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা ও সম্প্রতি বহিষ্কার হওয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজি মুজিবর রহমান নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। তাদের উভয়েরই দাবি নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই আওয়ামী লীগ এখনও বান্দরবানে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। তবে বান্দরবানের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈনসিং ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এবারও নমিনেশন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন এখনই সবাই একত্রিত হতে না পারলে বিএনপির মতো বান্দরবানে আওয়ামী লীগেরও ভরাডুবি হতে পারে। তাদের দাবি সংসদ নির্বাচনের আগেই বহিষ্কৃতদের নিজ দলে ফিরিয়ে আনা উচিৎ এবং কোন্দল মিটিয়ে ফেলা দরকার।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক কাজি মো. মুজিবর রহমানের দাবি, ‘বান্দরবানের নেতাকর্মীরা আমাকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা রাখে না। আমাকে যেহেতু কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করেনি, তাই এখনও আমি বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি।’ তিনি বলেন, আমার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই নেতাকর্মীরা আজ এতবছর বান্দরবানে বীর বাহাদুরকে ভোট দিয়ে বান্দরবানের আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রেখেছে।
তবে বান্দরবান আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি একে এম জাহাঙ্গীরের দাবি তাদের মধ্যে কোনও কোন্দল নেই। তিনি বলেন, তিন মাস আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদের সাতটি উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার মধ্যে ২৭৬টি কেন্দ্র কমিটি করে তা ইতোমধ্যে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে কেন্দ্র ভিত্তিক প্রচার, জনসংযোগ, জনসভা এবং অবহিতকরণ উঠোন বৈঠক কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বান্দবানের রাজনীতিতে বিএনপির দুটি গ্রুপ সক্রিয়। এর একটি হলো জেরী গ্রুপ ও অপরটি মা ম্যা চিং গ্রুপ। জেরী গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাচিং প্রু জেরী ও অন্যদিকে মা ম্যা চিং গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন মিসেস মা ম্যা চিং। বর্তমানে উভয়পক্ষই নমিনেশন পাওয়ার জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছে।
তবে বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, তাদের মধ্যে কোনও গ্রুপিং বা কোন্দল রয়েছে বলে তারা মনে করেন না। যেই নমিনেশন পাবে, তাকেই তারা সাদরে গ্রহণ করবেন।
দলীয় কোন্দলের বিষয়টি অস্বীকার করে মিসেস মা ম্যা চিং বলেন, বান্দরবানে বিএনপির মধ্যে যে সমস্যা আছে তা আমি দলীয় কোন্দল মনে করি না। কেন্দ্র যাকে নমিনেশন দেবে তাকেই সবাই বরণ করে নেবে। তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমি যতবার নির্বাচন করেছি ততবারই সাচিং প্রু জেরী বাবুর চেয়ে তুলনামূলক বেশি ভোট পেয়েছি। তারপরও কেন্দ্র যাকে ভাল মনে করবেন তাকেই নমিনেশন দেবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে অপর গ্রুপের নেতা সাচিং প্রু জেরী কোন্দল বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সাচিং প্রু জেরীর অনুসারী ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক মো. ওসমান গণি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তবে অপর গ্রুপের নেতাকর্মীরা যদি আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতো তবে বান্দরবানে বিএনপিকে ভোটে পরাজিত করার মতো কোনও শক্তি থাকতো না। আমরা আশা করছি আমাদের দেশনেত্রী এ বিষয়গুলো বিবেচনা করেই নমিনেশন দেবেন।
নির্বাচন নিয়ে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছেন বান্দরবানের পাহাড়ী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও।
ইউপিডিএফ'র বান্দরবান জেলার সভাপতি ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমরা নির্বাচন বিষয়ে এখনও কেন্দ্র থেকে কোনও সিদ্ধান্ত পাইনি। এ বিষয়ে আমি কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে এখনেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি। তবে আমি ২০০১ সালে, ২০০৮ সালে ও ২০১৪ সালে নির্বাচন করেছি। আশা করছি কেন্দ্র সিদ্ধান্ত দিলে এ বছরও নির্বাচন করবো।
পাহাড়ের অপর শক্তিশালী সংগঠন জন সংহতি সমিতির (জেএসএস ) সভাপতি উচ মং মারমা বলেন, কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে। সে মতে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। তবে আমরা স্বতন্ত্র নাকি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন করবো সে বিষয়ে নির্দেশনা পাইনি। আমরা এখনও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন