গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন না করেও বিভিন্ন ভাউচার দাখিল করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে তৎকালীন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিরঞ্জন কুমারের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তিনি মা দিবস ও কন্যাশিশু দিবস উদযাপন না করেও ভুয়া বিল-ভাউচার দাখিল করে টাকা উত্তোলন করেছেন।
বর্তমানে নিরঞ্জন কুমার ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা বিষয়ক অফিসে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। একই সাথে হরিপুর থানা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
বিল এক্সট্রাক্ট ফরম (নং-০৪/২০১৭-১৮) থেকে জানা গেছে, গত বছর শোক দিবস পালন উপলক্ষে ব্যানার তৈরি বাবদ ১ হাজার, মাইক ভাড়া বাবদ ১ হাজার এবং ২০ কেজি খুরমা ক্রয় বাবদ ২ হাজার টাকাসহ মোট চার হাজার টাকা উত্তোলন করেন তিনি। এই ভুয়া বিল-ভাউচারের ৪ হাজার টাকা হালাল করার জন্য যথারীতি ৬০০ টাকা ভ্যাটও প্রদান করা হয়। ভাউচার দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে জানা গেছে ওই ভাউচারগুলো ভুয়া।
খবর নিয়ে জানা গেছে, এই বিলের সঙ্গে যে ভাউচারগুলো সংযুক্ত করা হয়, সেগুলোও ভুয়া স্বাক্ষর যুক্ত।
স্বরলিপি ডিজিটাল প্রেসের প্রোপাইটর আবুল খায়ের জানান, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা গত বছর শোক দিবসের কোনো ব্যানার তার প্রেস থেকে তৈরি করেননি। ক্যাশ মেমোতে যে স্বাক্ষর দেখা গেছে, ওই স্বাক্ষর তার বা প্রতিষ্ঠানের কারো নয়।
একই কথা জানালেন মিমু মাইক সার্ভিসের মালিক মোজাম্মেল হকও।
তিনি জানান, গত বছর ১৫ আগস্ট একমাত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ছাড়া কোনো দপ্তর কিংবা কর্মকর্তা আমার মাইক ভাড়া করেননি। আর ভাউচারে যে স্বাক্ষরটি আছে তা আমার নয়।
হোটেলের খুরমা ক্রয়ের ভাউচারটিরও একই অবস্থা।এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তৎকালীন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (বর্তমানে হরিপুরের মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, অতিরিক্ত দায়িত্ব) নিরঞ্জন কুমার জানান, আমি এই মুহূর্তে ঠিক মনে করতে পারছি না। এক বছর আগের কথা তো। এগুলো বিষয় কেন এখন বের করছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান তিনি।
তৎকালীন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিভিন্ন দিবস পালন না করে বিল উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বর্তমান মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বেলাল হোসেন জানান, গত বছর ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন না করেও বিল উত্তোলন করেছেন তিনি, এটি সত্য। শুধু তাই নয়, মা দিবস ও শিশু কন্যা দিবস পালন না করেও বিল তুলেছেন। এসব অনুষ্ঠান পালন না করে বিল-ভাউচার দিয়ে টাকা তুলে তা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
হরিপুর উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই উপজেলার ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন দফতরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। মহিলা বিষয়ক প্রশিক্ষণ সুপারভাইজার জানান, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেও কোনো ফল হয় না। তার খুঁটি খুব শক্ত।
তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কপি থেকে জানা গেছে, প্রতি ইউনিয়নে ১৩৩ জন মহিলাকে মাতৃত্বকালীন প্রশিক্ষণ ভাতা ১৫০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে ১০০ টাকা দেওয়ার কথা সেখানে দেওয়া হয় ৬০ টাকা করে। এমনকি অনেককে টাকা দেননি মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, যেসব অফিসার শোক দিবস পালন না করেই ভুয়া বিল বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শুধু অপমানই করেননি, গোটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
পাঠক মন্তব্য
যে দেশে ৪,০০০,০০,০০,০০০.০০ (চারহাজার কোটি) টাকা "কিছুই না" সে দেশের এক কর্মকর্তার ৪,০০০.০০(চার হাজার) টাকার অনিয়মের জন্য নিউজ করা একটা বালখিল্যতা ও ব্যক্তিগত শত্রুতা মনে করলে কি ভুল হবে??? এ রকম কত শত ভূয়া ভাউচারে কত শত কোটি টাকা যে প্রতিদিন লোপাট হচ্ছে তার হিসাব কে রাখে??
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন