ঘুষ ছাড়া মোংলা বন্দরের জেটি থেকে বের হয় না আমদানীকৃত রিকন্ডিশন গাড়িসহ কন্টেইনারের বিভিন্ন পণ্য। লাগামহীন ঘুষের পাগলা ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় আমদানিকারকেরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, বন্দর জেটির অভ্যন্তরের সিনিয়র আউটডোর অ্যাসিসটেন্ট ইবনে হাসানের স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ তারা। টাকা না দিলে গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্যের ছাড় করণের বিল ভাউচার দেন না তিনি।
এ অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘুষ দিয়ে পণ্য ছাড় করেন আমদানিকারকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মোংলা বন্দর থেকে প্রতিদিন ৫০ টি কিংবা তার কম-বেশি গাড়ি বের হলে সিনিয়র আউটডোর অ্যাসিসটেন্ট ইবনে হাসানকে গড়ে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ৫০ টি গাড়ির বিল ভাউচার তার হাত দিয়েই করাতে হয়। তাকে সন্তুষ্ট না করলে আমদানিকারকদের পক্ষে গাড়ি ছাড়ের বিলপত্র নেয়া অসম্ভব বলেও জানান তারা।
এছাড়া তারা আরো জানান, জেটির ভিতরে বিদেশ থেকে আমদানিকারকদের কন্টেইনারে আসা বিভিন্ন পণ্য ছাড়াতেও ইবনে হাসানকে ঘুষ দিতে হয়। এটা রীতিমত হয়রানি বলেও বন্দর ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। এর থেকে মুক্তি পেতে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও লাভ না হওয়ায় বন্দর ব্যবহারকারীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বারভিডা’র সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, ‘এসব অসাধু ব্যক্তিদের কারণে আবারো মোংলা বন্দর ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।’
বারভিডা’র সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য ছাড় করতে যে ঘুষ দিতে হয় সেটা আমাদের সয়ে গেছে। এখন আর আমরা এটা নিয়ে ভাবিনা, স্পিড মানি দিতেই হবে।’ তিনি আরো বলেন, বন্দর জেটি থেকে এসব অসাধু কর্তাদের জন্য গাড়ির যন্ত্রাংশও চুরি হয়ে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে সিনিয়র আউটডোর অ্যাসিসটেন্ট ইবনে হাসানের সাথে যোগাযোগ (মোবাইলে) করা হলে, সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন। এরপরও তার সাথে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পার্সোনাল শাখা সূত্র জানায়, সিনিয়র আউটডোর অ্যাসিসটেন্ট ইবনে হাসানের চাকরিটাই হয়েছে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে। সম্পূর্ণ ভুয়া প্রক্রিয়ায় তার চাকরি চলছে। সূত্র আরো জানায়, তিনি যে সময়ে চাকরিতে ঢুকেছেন সেই সময়ে তার নিজ জেলা কোটা ছিল না। ২০১৩ সালে গোপালগঞ্জের কোটা না থাকলেও তিনি জেলা কোটায় কিভাবে চাকরি পান জানতে চাইলে ইবনে হাসান জানান, তিনি সে সময় পোষ্য কোটায় ঢুকেছেন। তবে সে সময়ও (২০১৩) পোষ্য কোটা ছিল না বলে বন্দরের পার্সোনাল শাখা নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) প্রনব কুমার রায় বলেন, ‘চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করে বন্দরে কেউ চাকরি নিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ব্রেকিংনিউজ/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন