২০১২ সাল ও তার পরে ভোটার হওয়া প্রায় ৯৩ লাখ নাগরিককে কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যথারীতি কার্যক্রম শুরু হলে বেশ কিছু জেলা-উপজেলায় এনআইডি কার্ড বিতরণও করা হয়। ২০১২ সালের পর যেসব ভোটার কাগজে মুদ্রিত জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়েছে, সেগুলো নিম্নমানের ছিল বলে স্বীকার করেছে খোদ নির্বাচন কমিশনই।
৮ আগস্ট, বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক সরকার মো. আশরাফুল আলম বিষয়টি জানিয়েছেন।
আশরাফুল আলম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১২ সাল ও তার পরবর্তী সময়ে যেসব উপজেলা ও থানায় ইতোমধ্যে কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে, সেসব জাতীয় পরিচয়পত্রের মান তুলনামূলক নিম্নমানের হওয়ায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জাতীয় সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ২০১২ সাল ও তার পরবর্তী সময়ে হওয়া ভোটারদের মুদ্রিত লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র ৭টি জেলার সব উপজেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের ১২তম সভায় ২০১২ সালের হালনাগাদের পর ভোটার হওয়া নাগরিকদের কাগজ মুদ্রিত লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কোনো প্রকার কার্ড না পাওয়া প্রায় ৯৩ লাখ ভোটারের জন্য কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড কার্ড আইডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে প্রস্তুত করে উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে পৌঁছানোর বিষয়ে বিশ্বব্যাংক থেকেও অনুমোদন পায়।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এক লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৯৩ লাখ ভোটারের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি লিমিটেড ইতোমধ্যে ৪০টি জেলার সব উপজেলার প্রায় ৭০ লাখ কার্ড মুদ্রণ শেষ করেছে। যা মোট কাজের প্রায় ৭৫ ভাগ। এর মধ্যে ৭টি জেলার সকল উপজেলার কার্ড সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে পাঠানো হয়েছে। বাকি ২৩ লাখ কার্ড মুদ্রণ সম্পন্ন হতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে। চলতি মাসেই সব জেলার সব উপজেলা নির্বাচন অফিসে কার্ড পৌছানো সম্ভব হবে।’
স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি লিমিটেডের ৯৩ লাখ কার্ড ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দেওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে তারা দিতে না পারলেও ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্ড তৈরির কাজ শেষ করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির তৈরি পরিচয়পত্র অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে সেসব না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানকে আবারও নতুন করে মানসম্পন্ন ৯৩ লাখ কাগজে মুদ্রিত কার্ড তৈরির কাজ দেয় কমিশন। বর্তমানে কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি পরিচয়পত্র কমিশনকে সরবরাহ করছে। কমিশন সূত্রে জানা যায়, সেগুলো বেশ কয়েকটি উপজেলায় বিতরণের জন্য ইতোমধ্যে পাঠানোও হয়েছে।
৮ আগস্ট সরকার মো. আশরাফুল আলমের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০১২ সাল ও পরবর্তী সময় নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে যারা এখনো পরিচয়পত্র পাননি, তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের বিবেচনায় কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র মুদ্রণ করে বিভিন্ন উপজেলা ও থানায় প্রেরণ করা শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী তিন মাসের মধ্যে মুদ্রণ কাজ শেষ করে উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসে ২০১২ সাল ও তার পরবর্তী সময়ের না দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র প্রেরণ সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার মো. আশরাফুল আলম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘২০১২ সালের পর মুদ্রিত লেমিনেটেড কার্ড দেওয়া হয়। নিম্নমানের লেমিনেট কার্ড ধরা পড়ার আগে কিছু কার্ড বোধহয় বিতরণ হয়েছে। সেসব লোক যদি বলেন, ‘‘আমরা নিম্নমানের কার্ড পেয়েছি, আমাদেরকে ভালো মানের কার্ড দেন।’’ তাহলে আমরা তাদেরকে ভালো মানের কার্ড দিব।’
আশরাফুল আলম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিকে দায়িত্ব দেওয়ার পর আমরা ৫ থেকে ৭টি উপজেলায় তাদের মুদ্রিত এনআইডি কার্ড বিতরণ করেছি। সেগুলোর মান মোটামুটি ভালো ছিল। পরবর্তীতে যখন প্রতিষ্ঠানটির কার্ড দেওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছিল, তখন তারা তাড়াহুড়া করছিল। ওই সময় তারা নিম্নমানের কার্ড তৈরি করছিল। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, এই নিম্নমানের কার্ডগুলো আমরা নিব না। এখন প্রতিষ্ঠানটি আবার ৯৩ লাখ কার্ডই পুনমুদ্রণ করছে।’
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন