সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কথিত জিনের বাদশাহ হাফিজুলের চিকিৎসার প্রতারণার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার শত শত পরিবার। উপজেলার বামনবাগ গ্রামের জীনের বাদশা হাফিজুল ইসলাম কবিরাজী চিকিৎসার নামে সহজ সরল নারী-পুরুষকে ঝাড়-ফুঁক দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকার সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ওই এলাকার মানুষের অভিযোগ, বামনবাগ গ্রামে মো. হবিবর রহমানের ছেলে বেগম নুরুন নাহার তর্কবাগীশ অনার্স কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ২য় বর্ষের ছাত্র মো. হাফিজুল ইসলাম (১৮)। তিনি এলাকায় জিনের বাদশা নামে পরিচিত। তার নিজ বাড়িতে আসন বসিয়ে সকল প্রকার স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার নাম করে কবিরাজী চিকিৎসা করান। চিকিৎসার নামে সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার নারী-পুরুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
শিশু, যুবক ও বৃদ্ধ নারী-পুরুষের যৌন, মানসিক প্রতিবন্ধী, হার্ড, বিবাহ বন্ধন, বিবাহ বিচ্ছেদ, তরুণ-তরুণী প্রেমের বন্ধন, ভূত-পেত্নী আক্রান্তসহ সকল প্রকার শারীরিক অসুস্থতা নিরাময়ের চিকিৎসা দেওয়ার নামে অবৈধ উপায়ে টাকা হাতিয়ে নেবার জাল পেতে বসে রয়েছে। বিশেষ করে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রতিটি এলাকায় নারী-পুরুষ কিছু দালাল রাখা হয়েছে তারা জিনের বাদশার সাফাই গাইছে। ফলে রোগীর পরিবার জিনের বাদশার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নে পুরুষ ও নারী দালাল নিয়োগ দেওয়া রয়েছে যারা গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জিনের বাদশার চিকিৎসায় রোগ ভালো হবার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
ওই দালালরা মোটা অংকের কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করে। এইভাবে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী পাঠিয়ে দালালির মাধ্যমে প্রতিদিন জীনের বাদশার কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
কবিরাজী চিকিৎসা নিতে আসা রতনকান্দি ইউনিয়নের কুড়ালিয়া গ্রামের মৃত দেলবাহার আলীর ছেলে ছোবাহান আলী বলেন, আমার ছেলে জাহিদুল ইসলাম এর চিকিৎসার জন্য এসেছি। কবিরাজের সাথে কথা বললাম সে বললো- আপনার ছেলেকে বান মেরেছে। দুই হাজার টাকা লাগবে। আমি এক হাজার আটশত টাকা জমা দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে রয়েছি এখনো সিরিয়াল পাইনি। বাড়ির লোকজনকে তাগাদা দিলে তারা বলে আপনার ছেলের বিষয়ে ধ্যানে বসার পর চিকিৎসা দেওয়া হবে।
বাগবাটী ইউনিয়নের ঘোরাচড়া গ্রামের মোছা. জবেদা খাতুন বলেন, ৫ বছরের নাতি কাওসারকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছি। কবিরাজীর ভাষায় কাওছারের আচমকা রোগ হয়েছে। কাওছারকে আসনের পাশে শুয়ে রাখা হয়েছে। তিন ঘণ্টা ধরে শুয়ে রাখা হয়েছে। কবিরাজ বলছে ঠিক হয়ে যাবে।
চিকিৎসার বিষয়ে জীনের বাদশার বাবা হবিবর বলেন, আমার বাপ দাদা কবিরাজী চিকিৎসা করতো। সেই পেশাটা এখন আমার ছেলে করছে।
কবিরাজী চিকিৎসার সরকারি কোন অনুমতি আছে কিনা সে বিষয়ে তিনি জানান, কাগজপাতি জমা দিয়েছি অচিরেই অনুমতি পাবো।
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পঞ্চানন্দ দাসকে বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি বলেন, সরেজমিনে তদন্তপূর্বক জিনের বাদশার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন