শাহাতন নেছা শাহু। বয়স ৭৫ অতিক্রম করেছে। স্বামী করিম শিকদারের বয়সও ৮০ বছরের কাছাকাছি। এখন শ্রবণ শক্তি হারিয়েছে। সন্তানের অবহেলা-অপমানের শিকার হয়ে পরপারের অপেক্ষায় বৃদ্ধ বাবা আ. করিম শিকদারের জীবনের শেষ আশ্রয় হয়েছে বড় মেয়ের জামাইর বাসায়। শাহাতন নেছা (শাহু) চরম অযত্ন ও অবহেলায় প্যারালাইজড হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় স্বামীর ভিটায়। এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উত্তর খাগছাড়া গ্রামে।
আ. করিম শিকদার ও তার স্ত্রী শাহাতন নেছা শাহু এক সময় জীবনের সবটুকু শ্রম দিয়েছেন পুরো পরিবারের জন্য। অথচ বৃদ্ধ বয়সে রোগাক্রান্ত আর স্বজন বিচ্ছিন্ন হয়ে এই আ. করিম শিকদার ও তার স্ত্রী শাহাতন নেছা শাহু। এখন তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন শুধুই নিঃসঙ্গতা।
নিজের সর্ম্পকে শাহাতন নেছা (শাহু) বলেন, স্বামীর স্বল্প আয়ে চলতো সংসার। ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে সংসারে। সেই সন্তানদের কোলে-পিঠে লালন-পালন করে বড় করেছি। প্রিয় সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় কঠোর পরিশ্রম করেছি। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে সন্তানের মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার। অথচ স্বামী আ. করিম শিকদার বৃদ্ধ, শারীরিক ভাবে অচল ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী হওয়ায় সেই সন্তানের অবহেলায় বোঝা হয়েছেন এখন। একমাত্র বেকার ও অর্থ দুর্বল ছেলে বাদল শিকদার ছাড়া কেউ তার পাশে নেই।
এদিকে, অর্থ-সম্পদের মালিক সৌদি প্রবাসী শহীদ শিকদার এবং কাতার প্রবাসী অহিদুল শিকদার বাবা-মা খবর রাখে না। বৃদ্ধ এই দম্পত্তির সৌদি প্রবাসী ছেলে শহীদ শিকদারের স্ত্রী রাশিদা বেগম তাড়িয়ে দিয়েছে শাহাতন নেছা শাহুকে। নিজের দুঃখের কথা বলতেই বারবার কান্নায় মুর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি’।
নিজের দুই সন্তান সৌদি প্রবাসী শহীদ শিকদার ও কাতার প্রবাসী অহিদুল শিকদারে অর্থবিত্তসহ ভালোই আছে। বউদের অযত্ন-অবহেলায় না খেয়ে দিন-রাত যাপন করছে বৃদ্ধ-দম্পত্তি।
ছেলে বাদল শিকদার বলেন, মা দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইস হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। নিজের দুই পায়েও হাঁটাচলা করতে পারেন না। এখন চলাফেরা করতে হয় অন্যের সাহায্যে নিয়ে। আমি তার ছেলে- কি করে মা’কে প্রস্রাব-পায়খানা করাই। আমি গরীব মানুষ। আমার বউসহ অন্য (সৌদি প্রবাসী শহীদ শিকদার এবং কাতার প্রবাসী অহিদুল শিকদার) ভাইদের বউরাও মায়ের সেবা যন্ত করছে না। বরং আমি বললে, তারা আমাকে মারপিট করার ও নারী নির্যাতন মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
মেয়ে নুর নাহার বেগম বলেন, ‘স্বামী-সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার আমার, সব সামাল দিয়ে প্রতিদিনই মাকে দেখে আসছি। ভাই-ভাবিদের অযন্ত ও চরম অবহেলায় বাবা এখন বড় বোনের বাড়িতে থাকেন। মা প্যাারালাইস। তাই কেউ তার পাশে নেই। মা’র সেবার করার জন্য ভাবিদের টাকা দিতে চাই তবুও তারা আমার মা’র সেবা-যন্ত করবে না। একমাত্র ভাই বাদল শিকদার সেই একটু মা’র দেখা-শোনা করেন।
স্থানীয় মিজানুর রহমান শিকদার জানান, এরা আমার বংশের লোক। স্থানীয় প্রায় ২০-২৫ জন গণ্যমান্য ও জনপ্রতিনিধি নিয়ে কয়েক দফায় আ. করিম শিকদারের ছেলে ও বউদের নিয়ে বিষয়টি বুঝানো হলেও তার ছেলের বউরা অসুস্থ-প্যারালাইস মার সেবা-যত্ন করতে রাজি নয়। বিষয়টি অমানবিক। তাই প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বিডি প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন