পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খানের হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে শুরু করেছে। নিখোঁজের পর মামুনের বস্তাবন্দি পোড়াদেহ গাজীপুরের জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে নেমে পুলিশের কাছে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মর্মান্তিক এ খুনের ঘটনায় একটি চক্র জড়িত। বুধবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা ও হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন তরুণীসহ চক্রটির চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। এরা হলেন- মিজান শেখ, মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফি, সুরাইয়া আক্তার কেয়া এবং ফারিয়া বিনতে মীম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল বাতেন।
এর আগে ৮ জুলাই বন্ধু রহমত উল্লাহর সঙ্গে বনানীর একটি বাসায় আড্ডায় গিয়েছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন। সেখানে যাওয়ার পর বুঝতে পারেন চক্রের
ফাঁদে পড়েছেন। চক্রটির লক্ষ্য ছিল ভয়ভীতি দেখিয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে ‘ব্ল্যাকমেল’ করা। কিন্তু মামুন সেখানে থাকায় তাদের পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটে। চক্রের লোকজন তাদের দুই বন্ধুকেই বেদম মারধর করেন। একপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন মারা যান।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘গত ১০ জুলাই মামুনের বন্ধু রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রহমত পেশায় একজন প্রকৌশলী। এসময় রহমতউল্লাহ মামুন হত্যার বর্ণনা দিয়ে জড়িতদের নাম বলেন এবং নিহত মামুনের লাশের সন্ধান দেন। পরের পুলিশ গাজীপুরে রাস্তার পাশের একটি জঙ্গল থেকে মামুনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করে। এ বিষয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।’
তিনি জানান, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফি জানিয়েছে রহমতউল্লাহ তার বন্ধু মামুনকে নিয়ে বনানীর মডেল টাউনের ২/৩ এর ৫ নম্বর বাড়িতে যায়। পরে মিজান, সুরাইয়া, মীম মিলে মামুনকে হত্যা করে। সেখান থেকে লাশ গুম করার জন্য রহমত উল্লাহর গাড়িতে করে গাজীপুরের দিকে যাওয়া হয়। পরে কালিগঞ্জ থানার উলুখোলা এলাকার রাস্তার পাশে একটি জঙ্গলে গিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে চেহারা বিকৃত করা হয়।’
গ্রেপ্তারকৃতরা মামুনকে কিভাবে এবং কেন হত্যা করেছে তার আদ্যোপ্রান্ত বর্ণনা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তবে এখনো এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজন পলাতক। এ হত্যার সঙ্গে অন্যতম তিনজন আসামি স্বপন, দিদার ও আতিককে ধরার চেষ্টা চলছে। এদের মধ্যে মিজান পুলিশের একজন সাবেক বরখাস্তকৃত পরির্দশক, দিদার, স্বপন ও আতিক কোনো এক সময় সেনাবাহিনীতে চাকরী করতেন।
মামুন হত্যায় তিন নারী ও পাঁচজন অংশ নিয়েছিল বলে জানিয়ে আব্দুর বাতেন বলেন, তাদের ধরতে পারলেই এ হত্যার বাকিসব তথ্য ও আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
এই ঘটনায় বুধবার মামুনের বন্ধু আদালতে ১৪৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। বাকিদেরও আদালতে তোলা হবে বলে জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।
এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও জানান, মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা তাদের ছিল না। তারা মূলত মামুনের বন্ধু রহমত উল্লাহকে ব্ল্যাকমেইলিং করে মোটা অংকের টাকা আদায় করত চেয়েছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় রহমতের সাথে মামুন সেখানে যাওয়ার পর। সেখানে মামুন নিজেকে পুলিশের কর্মকর্তা পরচিয় দিলে বিপদে পড়ার ভয়ে তারা মামুনকে মারধরের পর হত্যা করে।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন