বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সোচ্চার ফরিদপুরের প্রশাসন। বুধবার জেলার বোয়ালমারী ও সদরপুর উপজেলায় চার স্কুলছাত্রী বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন খান ও সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোবায়ের রহমান রাশেদ বাল্যবিয়ে চারটি বন্ধ করেন।
জানা যায়, বাল্যবিয়ে হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন খান উপজেলার গুনবহা গ্রামে স্বামী পরিত্যক্তা বিলকিস মল্লিকের বাড়িতে উপস্থিত হন। তখন বিলকিস মল্লিকের মেয়ে লিজা মল্লিক (১১) সঙ্গে উপজেলার গুনবহা গ্রামের শের আলীর (৪৫) বিয়ের আয়োজন চলছিল। লিজা মল্লিক গুনবহা স্টার প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাই স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। পরে ইউএনও বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দেন।
এদিকে বোয়ালমারী উপজেলার হাসামদিয়া গ্রামের জাহিদ মীরের কন্যা সুমা খানমের (১৪) বিয়ের আয়োজন চলছিল। বিকেলে ইউএনও হাজির হয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দেন। সুমা খানম হাসামদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
অপরদিকে বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের কামারহাটি গ্রামের মোস্তফা মোল্লার কন্যা সাকিলা আক্তার সাথীর (১৩) বিয়ের আয়োজন চলছিল। বিকেলে ইউএনও হাজির হয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দেন। সাকিলা আক্তার সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন খান জানান, বাল্যবিয়ের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করি। তিনি জানান, বর আসার আগেই বিয়েগুলো বন্ধ করা হয়। সবার পরিবারের কাছ থেকেই প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিবে না মর্মে মুচলেকা নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত দুই মাসে উপজেলার ১০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
এদিকে বর আসার আগেই কনের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দেন সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোবায়ের রহমান রাশেদ। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের ইসমাইল শেখের ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা মো. মোজাহারের মেয়ে কাকলী আক্তারের (১৪) বিয়ে বন্ধ করেন। কাকলী আক্তার পাশ্ববর্তী চরভদ্রাসন উপজেলার নয়াডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী।
জানা যায়, সদরপুর উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের ইসমাইল শেখের ডাঙ্গী গ্রামের মো. মোজাহারের মেয়ে কাকলী আক্তারের সঙ্গে জেলার নগরকান্দা উপজেলার মশালজোন গ্রামের মোসলেমের ছেলে পলাশ হোসেনের (২৮) বুধবার বিয়ের দিন ধার্য ছিল। বর পক্ষ কনের বাড়িতে হাজির হওয়ার আগেই গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে দুপুর ২টার দিকে কনের বাড়িতে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে কনে কাকলী আক্তারের জন্ম সনদ দেখে বয়স কম হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দেন ইউএনও জোবায়ের রহমান রাশেদ। এসম তিনি বর পক্ষকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কনের বাড়িতে আসতে নিষেধ করে দেন।
পরে ভাষানচর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোকলেস শেখ ও স্থানীয় কাওসার শেখ কাকলী প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেয়া হবে না মর্মে ইউএনও’র কাছে মুচলেকা দেন। এসময় সদরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন আহম্মেদসহ কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোবায়ের রহমান রাশেদ জানান, বাল্যবিয়ে হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিত্বে ভাষানচর ইউনিয়নের ইসমাইল শেখের ডাঙ্গী গ্রামে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হই। কনে কাকলী আক্তারের বিয়ের বয়স না হওয়ায় বিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। বর পক্ষকে আসতেও নিষেধ করে দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, পরে বাল্য বিয়ে দিবে না মর্মে স্থানীয়দের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন