পুলিশের টানা অভিযানে বগুড়ায় চিহ্নিত মাদক স্পটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ খুচরা মাদক ব্যবসায়ীই এখন কারাগারে। এরপরও একেবারে বন্ধ হয়নি মাদক বেচাকেনা। নতুন কৌশলে শহরের বস্তি এলাকায় এবং শহরের বাইরে গ্রামগঞ্জে মাদক মিলছে সহজেই। এসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। গত এক মাসের পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান পরবর্তী অনুসন্ধানে এসব তথ্য মিলেছে।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মে থেকে শুরু হওয়া জেলার ১২ উপজেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে মোট ৩৭৫টি মামলায় গ্রেফতার করা হয় ৫৩১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে। এই সময়ে উদ্ধার করা হয় ১০ হাজার ৯১২ পিস ইয়াবা, ৬৭৩ বোতল ফেনসিডিল, ৩৬ কেজি ৭৪ গ্রাম গাঁজা, ১১৪ দশমিক ৭০ গ্রাম হেরোইন ও ৯৭৫ পিস নেশাজাতীয় ইনজেকশন।
জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের মতো এখন বগুড়ায় হাত বাড়ালেই মাদক মিলছে না। তবে মাদক সেবন ও বিক্রি থামেনি। মাদকের চিহ্নিত স্পটগুলো বন্ধ হবার পর কৌশলে চলছে এই ব্যবসা। দুই দিনে বগুড়া শহরের মধ্যে বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।
শহরের চকসুত্রাপুর ও রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন হরিজন বস্তিতে এখনো মাদক বিক্রি করা হচ্ছে। এই স্থানে সহজেই মিলছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ ও হেরোইন। তবে অপরিচিত ক্রেতার কাছে এখানে মাদক বিক্রি করা হয় না। যারা পূর্বপরিচিত শুধু তারাই এখান থেকে মাদক কিনতে পারেন। এই দুই বস্থিতে ৭০০ থেকে ৮০০ পরিবারের বেশির ভাগই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এলাকার ছোট ছোট শিশুরা মাদক বহন করে। সিগন্যাল পেলে তারা লুকানো জায়গা থেকে মাদক এনে ক্রেতার হাতে দেয়। ঘিঞ্জি এই এলাকা দুটিতে এখন পর্যন্ত পুলিশি অভিযান হয়নি।
জানা গেছে, চকসুত্রাপুর বস্তিতে হরিজন অনিল, ভোটকা, পোটলা, জীবন, মিথুন, জনি, আকাশ, মোস্তাক এখন মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এরা এই বস্তিতে মাদকের স্টক করে রাখে। পরে বস্তির মানুষকে কমিশনের ভিত্তিতে মাদক বিক্রির কাজে লাগায়। রেলওয়ে বস্তির পাশে শাপলা নামের একজন মাদক ব্যবসায়ী এখনো ফেরি করে মাদক বিক্রি করছে। এছাড়া অনেক ব্যবসায়ী জেলে থাকলেও তাদের পরিবারের সদস্যরা কিংবা ভাড়া করা লোকেরা শহরের বাইরে তিনমাথা, গোদারপাড়া, ছোটকুমিড়া, বড়কুমিরা, বিবির পুকুর, হড়িগাড়ি, শাকপালা, রানীরহাট, জোড়া এলাকায় ভ্রাম্যমাণভাবে মাদক বিক্রি করছে। ক্রেতারা মোবাইলে যোগাযোগ করে মাদক নিচ্ছে।
উপজেলাগুলোর মধ্যে এখানো মহাস্থান, মোকামতলা, চন্ডিহারা, ন্যাংড়াবাজার, সান্তাহার, গাবতলীর সন্ধ্যাবাড়ি, জয়বাংলা ও রামেশ্বরপুরে দেদারছে মাদক বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে না বসে ঘুরে ঘুরে মাদক বিক্রি করা হচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মাদকবিরোধী অভিযানে তালিকাভুক্তদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়া এখনো অনেকে আত্মগোপনে রয়েছে।
জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সূত্র জানায়, হাত বাড়ালেই মাদক মিলছে এমন কথা শোনা গেলেও বগুড়ায় এখন আর সে অবস্থা নেই। যারা ক্রেতা তারা মাদক সংগ্রহ করতে না পেরে ছুটে বেড়াচ্ছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, ঈদের কারণে মাদকবিরোধী অভিযান দুইদিন শিথিল ছিল। এখন আবার চালু করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন