বৃষ্টির মধ্যে ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে এমপিও পাওয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে রাস্তায় বসে আছেন গাইবান্ধা সদর থেকে আসা আকলিমা আক্তার। তিনি রামপ্রসাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। তার স্বামী মো. ইউসুফ একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। দুজন এক সাথে ঢাকায় আন্দোলন করছেন। এ জন্য একমাত্র সন্তান মো. ইব্রাহীমকে নিয়ে এসেছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুল ও মাদ্রাসার শতাধিক শিক্ষক বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় পলিথিন বিছিয়ে বসে আছেন। কয়েকজন পলিথিনের উপর শুয়ে আছেন বুকে ফ্যাস্টুন নিয়ে।আন্দোলনকারী শিক্ষকরা এই প্রথমবারের মতো রাস্তায় ঈদ করেছেন। তারা গত ১০ তারিখ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো পাশের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী (ডলার) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এমপিওর জন্য প্রজ্ঞাপন না দেবে সরকার, ততক্ষণ রাস্তায় অবস্থান নিয়ে থাকবেন তারা। যত প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি হোক না কেন, কেউ ঘরে ফিরবে না।
তারা বলছেন, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে। তাহলে এখন কেন এমপিওভুক্ত করা হবে না।সংগঠনের সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘোষণা দিয়েছেন এমপিও করার জন্য। তাহলে এখন কেন সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।
গতকাল থেকে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এই নিয়ে ২৭ বার শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছেন।
লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য শিক্ষামন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদকে দোষারোপ করছেন তারা।
এ বিষয়ে সংগঠনের খুলনা জেলার সহ-সভাপতি শুভঙ্কর মজুমদার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন করার সময় শিক্ষামন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এমন আশ্বাস বিগত দিনেও তিনি দিয়েছেন। তাই তাকে আর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এ জন্য তার কথায় আন্দোলন থামানো হয়নি। এরপর ৫ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে যাই।
তিনি বলেন, এরপর শিক্ষামন্ত্রী আমাদের বলেছেন— আমার কথায় না সড়ে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো এক কর্মচারীর কথায় রাস্তা ছেড়েছেন। আমিও দেখে নিবো কিভাবে আপনারা এমপিও পান।
এ কারণে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো চেপে ধরেছেন মন্ত্রী। এমপিও পাওয়ার জন্য চলতি মাসের ১২ তারিখ আরো কিছু নীতিমালা সংযোজন করা হয়, যা অন্যায়ভাবে করা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষকরা।
এমপিও আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার হুঁশিয়ারি দেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা প্রত্যাশা করছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের দেয়া তথ্য মতে, এখনো ৫ হাজার ২৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও পায়নি।
শিক্ষকরা বলছেন, কত বছর বিনা বেতনে শিক্ষাদান করবো। মানবেতর জীবনযাপন আর করতে পারছি না। এ জন্য ঈদের সময় আমরা রাস্তায় নেমেছি।
উল্লেখ, ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভুখা মিছিল করেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রেসক্লাবের উল্টো দিক থেকে মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয় মিছিলটি।
১৪টি ধাপ পার করে একাডেমিক স্বীকৃতির পরও এমপিও না পাওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন