ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় গরিব ও দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে এসব চাল যথাযথভাবে বিতরণ না করে কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে গোপনে মজুদ করে রাখা হয়। এছাড়া কোথাও কোথাও চাল পাচারের সময় হাতে নাতে গ্রেফতারও হয়েছে।
ঈদের আগে গরিব ও দুস্থদের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মাধ্যমে ভিজিএফের চাল সারাদেশে দিয়ে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এসব চাল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তা ভিজিএফ কার্ডধারীদের মাঝে বিতরণ করে থাকেন। তবে অনেকক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে কিছু কিছু অসাধু ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও জনপ্রতিনিধিরা এসব চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতি করেছে। গরিব ও দুস্থদের মাঝে নাম মাত্র কিছু চাল বিতরণ করে নিজেদের পকেট ভাড়ি করার জন্য চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুদ করে রেখেছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি এসব চাল ব্যবসায়ীদের গোডাউন এমনকি আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গরিব ও দুস্থদের বঞ্চিত করে সরকারি চাল মজুদ করে রেখে বিক্রির পায়তারা করায় অভিযুক্তরা গরিবদের চেয়েও গরিব বলে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ। তাদের ভাষ্য মতে, এসব জনপ্রতিনিধি ও নেতারা নিজেরাই গরিব। তাই চাল বিতরণ না করে নিজেরাই খাওয়া এবং বিক্রির পায়তারা করছে।
প্রতিবছরেই ভিজিএফের চাল বিতরণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চেলে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অভাবে এ ধরনের অনিয়ম থামছে না বলে মনে করছে সাধারণ জনগণ।
গত কয়েকদিনে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বেশকয়েকটি জেলা থেকে ঈদ উপলক্ষে গরিব ও দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমাণ ভিজিএফের চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত বুধবার বিকেলে সুনামগঞ্জ থেকে ট্রাকে পাচার করে নিয়ে আসা ৩০ টন সরকারি চাল নেত্রকোনায় জব্দ করে পুলিশ। আটককৃত চালের মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার মাগুরার সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নে ভিজিএফের চাল কালবাজারে বিক্রির সময় ৩ জনকে আটক করা হয় ও ১৬ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। একই দিনে রংপুরের মিঠাপুকুরে দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের ২৭১ বস্তা চাল উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মোশফিকুর রহমান বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। এছাড়া বাগেরহাটের মোংলায় ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম ও ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগে মোংলা পোর্ট পৌরসভার দুই কর্মচারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
অন্যদিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে ৪৪৮ বস্তা ভিজিএফের চাল জব্দ করেছে বিজিবি সদস্যরা। এ ঘটনায় কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মণ্ডলসহ ১২ জন সদস্য ও ২ জন গুদাম মালিককে আসামি মামলা করা হয়। এছাড়া বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ভিজিএফ চাল পাচারের সময় ১৪ বস্তা চাল উদ্ধার করে পুলিশ।
গত ১২ জুন শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন দেওয়ানের অস্থায়ী কার্যালয় ও আটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫৬ বস্তা সরকারি ভিজিএফের চাল উদ্ধার করে পুলিশ।
একই দিনে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নে ঈদ উপলক্ষে সরকারের বরাদ্দ করা ভিজিএফের চাল কম দেওয়ার অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে এলাকাবাসী। এছাড়া এর পরদিন ১৩ জুন গাইবান্ধায় ভিজিএফের ১৭৬ বস্তা চাল জব্দ করে পুলিশ।
নওগাঁর রাণীনগরে একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে ভিজিএফ’র চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে চাল বিতরণ করা হয়। চেয়ারম্যান ও চাল বিতরণ তদারকি কর্মকর্তার যোগসাজসে ৪০ বস্তা চাল কালো বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে।
এছাড়া ঈদের দিন শনিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আবুল বাশার টুকুর বাড়ি থেকে ভিজিএফের ৩৬ বস্তা চাল উদ্ধার করে পুলিশ। ওই আওয়ামী লীগ নেতা চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে গোপনে মজুদ করে রেখেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
একইভাবে রাজবাড়ি থেকে ১৩৭ বস্তা ভিজিএফের চাল উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোরাপ আলী মন্ডল এসব চাল বিতরণ না করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছিল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন