জীবনের শুরুতেই দরিদ্রতা আর নানা অসঙ্গতির সঙ্গে লড়াই যেন ওদের নিয়তি। অভাব ওদের নিত্য সঙ্গী। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এরই মাঝে নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে ওরা। এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে উচ্ছাস থাকলেও উচ্চ শিক্ষার ব্যয় কিভাবে নির্বাহ হবে সে চিন্তা তাড়া করে ফিরছে ওদের। এ অবস্থায় তারা তাকিয়ে আছে সমাজের বিত্তবানদের দিকে। তাদের একটু সহানুভূতি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চার অদম্য মেধাবীর আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
বিকাশ গোস্বামী পূর্বা: কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞায় শাখায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এটা তার কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের ফল। নিজপাড়া গোপালগঞ্জ গ্রামের কয়েল শ্রমিক বিজন গোস্বামী ও মা চায়না গোস্বামীর ছেলে বিকাশ। বিকাশ জানায় নিজেদের কোন জমিজিরাত নেই। ৪ শতক জমির উপর বাড়ি করে তাদের বসবাস। বাবার মজুরির টাকা দিয়ে কোন মতে তাদের তিনজনের সংসার চলে। এতোদিন বাবা অতিকষ্টে আমার পড়ার খরচ জোগালেও দরিদ্রতার কষাঘাতে বর্তমানে তার পক্ষে শিক্ষার খরচ চালানো সম্ভব না। বিকাশের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। মা চায়না গোস্বামী জানান, দরিদ্রতা আর অভাব-অনটনের সংসারে ছেলের স্বপ্ন কি পূরণ হবে?
দূর্বাদল গোস্বামী কাব্য: কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে দূর্বাদল গোস্বামী। সে উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের নিজপাড়া গোপালগঞ্জ গ্রামের কর্মহীন বিপুল গোস্বামী ও গৃহিনী শোভারানী গোস্বামীর ছেলে। বাড়ি ভিটা ৪ শতক জমি ছাড়া কোন জমি জিরাত নেই তাদের। বড় মেয়ে অনার্স পাস করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। দুই ভাই বোনের পড়ালেখার খরচ চালাতে দরিদ্র পিতার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দূর্বাদল জেএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল এবং এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাই কে তাক লাগিয়ে দিয়েছে দূর্বাদল। ছেলে চায় ইনঞ্জিনিয়ার হতে। কিন্তু দরিদ্র বাবার সামান্য আয়ে উচ্চ শিক্ষায় খরচ চালানো সম্ভব নয়। ভালো ফলে উজ্জীবিত হলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুচিন্তায় তার বাবা-মা।
রিনা আকতার: রিনা ফকিরের তকেয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণীর ন্যায় এসএসসিতেও বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে পিইএস সিতেও জিপিএ ৫ পেয়েছিল। কাশিনাথ গ্রামের নূরল হকের মেয়ে সে। রিনা জানায় ১ ভাই ও ২ বোন পড়ালেখা করে। বসতভিটা ৬ শতক জমি ছাড়া কোন জমি জমা নেই তাদের। অর্ধাহার-অনাহারসহ সব প্রতিবন্ধকতাকে পদদলিত করে ভালো কলেজে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রিনা। রিনা আরো জানায় সে নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ জোগাড় করতো। মা আছমা বেগম মেয়ের সাফল্যে খুশি হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মেয়ে চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে, কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে কিভাবে তা সম্ভব। সংসারে পিতাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর ওপর নির্ভরশীল ৫ জনের সংসার। তিনি মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
শাহাজাহান ভান্ডারী: ফুটপাতে সামান্য চা দোকানীর ছেলে প্রমাণ করেছে ইচ্ছা আর অধ্যবসায় থাকলে সাফল্যের শীর্ষে ওঠা যায়। শাহজাহান কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সে পিইসি ও জেএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়েছিল। কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর গ্রামের চা দোকানী মো. আনোয়ার হোসেন ও মোছাঃ শাহিনুর বেগমের ছেলে সে। ২ ভাই ও পিতামাতা নিয়ে তাদের সংসার। নিজস্ব বসতভিটা ৫ শতক জমি ছাড়া কোন জমি জমা নেই তাদের। শাহজাহান জানায়, বাবার সাথে ছুটি শেষে চা দোকানে কাজ করত সে। বাবার আয়ে তাদের সংসার চলে না। অভাবেব সংসারে অর্থ জোগান ও পড়ালেখার খরচ জোগাতে প্রাইভেট পড়ান ও বাবার চা দোকনে কাজ করেছে সে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী তাকে বই খাতা কলম ও আর্থিক সহযোগিতা করতেন সব সময়। শাহজাহানের মা শাহিনুর জানায় ছেলের স্বপ্ন সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার। কিন্তু অভাবের সংসারে তার সে স্বপ্ন পূরণ হবে কিভাবে?
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন