রংপুর-লালমনিরহাটবাসীর বহু প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। শেষ হয়েছে সংযোগ সড়কের কাজও। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির উদ্বোধন করার কথা থাকলেও তা হয়নি। এরপর কেটে গেছে প্রায় দুই মাস।
নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর গেল বন্যায় জনগণের ভোগান্তি লাঘব করতে সাময়িক সেতুটি খুলে দেয়া হলেও পরে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে নৌকায় করে নদী পারাপার করছিলেন এ পথের যাত্রীরা। পরে আর সেতু দিয়ে চলাচল উন্মুক্ত করা হয়নি। সম্প্রতি স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগশাজশ করে সেতুর গেট খুলে দিয়েছে সেতু নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী মানুষ ও যানবাহনে থেকে প্রতিদিনই নেয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা।
লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ১২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থ্যের এ দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু। ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী বৈঠকে (একনেক) তিস্তা দ্বিতীয় সড়ক সেতুর নির্মাণে ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু নির্মাণ এলাকার দুই পার্শ্বে রংপুরের গঙ্গাচড়া হলেও এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় লালমনিরহাট এলজিইডি। সেতুটি নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন। প্রথমে সেতুটির নির্মাণ সময় ছিল দুই বছর চার মাস। নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ করতে না পারায় কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে এ বছরের জানুয়ারি শেষ হয়। পরে নির্মাণ কাজ শেষে হলে সেতুটি লালমনিরহাট এলজিইডিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এখন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগে সেতু চালু হওয়ায় লালমনিরহাট জেলার এলজিইডি থেকে রংপুর জেলা পুলিশ সুপারকে সেতুর গেইট খুলে দেয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলতি মাসের ১৬ এপ্রিল চিঠি দেয়া হয়। চিঠি দেয়ার পরও সেতু দিয়ে চলাচল অব্যাহত রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সেতু দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন ও মানুষ চলাচল করছে। এ সুযোগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। যাতায়াতে বাড়তি টাকা নেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন যাত্রীরা। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কেইউপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশিদুজ্জামান আহমেদ বলেন, ঢাকাসহ রংপুরে যাতায়াতের জন্য এ সেতুটি স্থানীয় জনগণের একদিকে যেমন সময় বাঁচাবে, তেমনি হবে অর্থ সাশ্রয়। বর্তমানে এ সেতু দিয়ে চলাচলে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গরীব ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সেতুটি দ্রুত খুলে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী সেতু উদ্বোধনের আগেই এটি খুলে দেয়া ঠিক হয়নি বলে জানান স্থানীয় লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী।
তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশনের জিএম মোবাইল ফোনে বলেন, সেতুর নির্মাণ কাজ শেষে এলজিইডিকে বুঝিয়ে দিয়ে আমরা ঢাকায় চলে এসেছি। কে বা কারা গেট খুলে দিয়েছে সেটা আমাদের জানা নেই।
জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ও লালমনিরহাট-২ আসনের সাংসদ নুরুজ্জামান আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে আসলে জানা যাবে, কবে নাগাদ সেতুটি চালু হবে।যারা সেতুর গেট খুলে দিয়েছে আমরা তাদের বিরোধে আইনি ব্যবস্থা নেব।
উল্লেখ্য, সেতুটি উদ্বোধন হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সড়কপথের দূরত্ব কমে যাবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। কমে আসবে সময় ও জ্বালানি খরচ।এটি চালু হলে পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের জীবন চিত্র। সহজ হবে ভারত-ভুটান ও নেপালের সঙ্গে এদেশের ব্যবসা বাণিজ্য।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন