ঝালকাঠিতে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপকের কক্ষে চাঁদা চাইতে ঢুকছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা ইয়াসিন ভূঁইয়া। তাঁর পেছনে পেছনে ঢুকছেন টাউন পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. বশির উদ্দিন ও কনস্টেবল সমির। ছবি : কালের কণ্ঠ
ঝালকাঠিতে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর নাম ভাঙিয়ে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেলা ডিপো ব্যবস্থাপকের কাছে চাঁদাদাবির ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে জড়িত দুই পুলিশ সদস্যের নাম না থাকায় শুরুতেই ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ডিপো ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবর রহমানকে বাদী বানিয়ে রবিবার রাতে মামলা নিয়েছে ঝালকাঠি থানা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত টাউন পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বশির উদ্দিন ও কনস্টেবল সমিরের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় জেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য ইয়াসিন ভূঁইয়াকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরো একজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া অভিযোগে এসআই মো. বশির উদ্দিনের নাম রয়েছে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শহরের ডাক্তারপট্টির বাসিন্দা ইয়াসিন মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেলা ডিপো ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবর রহমানের কাছে শনিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে কল দেন।
অন্য পাশ থেকে শিল্পমন্ত্রীর লোক পরিচয় দিয়ে তাঁর অবস্থান জানতে চান ইয়াসিন। ডিপো ব্যবস্থাপক বাইরে আছেন জানালে ইয়াসিন রবিবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে আসার কথা বলেন। রবিবার দুপুর ১২টায় ইয়াসিন শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. বশির উদ্দিন ও কনস্টেবল সমিরকে নিয়ে একটি কালো রঙের প্রাইভেট কারে মেঘনা ডিপোতে যান। ডিপো ব্যবস্থাপকের কক্ষে গিয়ে বসেন তিনজন। ডিপো ব্যবস্থাপককে একটি শপিংব্যাগে উপহারসামগ্রী তুলে দেন ইয়াসিন। এই উপহার শিল্পমন্ত্রী তাঁর জন্য পাঠিয়েছেন বলে জানানো হয়। এ সময় মুঠোফোনে ইয়াসিন একজনের কাছে কল দিয়ে ডিপো ব্যবস্থাপককে ‘শিল্পমন্ত্রী কথা বলবেন’ বলে ধরিয়ে দেন। এরপর ফোন কেটে দিলে ইয়াসিন শিল্পমন্ত্রীর কথা বলে ডিপো ব্যবস্থাপকের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা চান।
মেঘনা ডিপো ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘থানায় দায়ের করা এজাহারটি পুলিশ লিখে দিয়েছে। এজাহারে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের নাম উল্লেখ করা হয়নি। আমাকে যেভাবে বলা হয়েছে, আমি সেভাবেই এজাহারে স্বাক্ষর করেছি। এজাহারের কপি এখনো আমাকে দেওয়া হয়নি। তবে পুলিশ সুপারের কাছে যে অভিযোগটি দিয়েছি, সেখানে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই তদন্তকারী কর্মকর্তা সব কিছু বুঝতে পারবেন।’
তদন্ত কর্মকর্তা ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক (অভিযান) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মামলার তদন্তকাজ শুরু করেছি। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে দেখা হবে। যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাদী এজাহারে যা লিখেছেন, তা-ই গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত করে যদি কোনো পুলিশের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন