কুষ্টিয়ায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধরের পর অজ্ঞান হলে মাথার চুল কাচি দিয়ে কেটে দেয় স্বামী।পরে নির্যাতিতার বাবা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নির্যাতিতা গৃহবধূ শাপলা খাতুন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়নপুর ইউনিয়নের সাইফুল মৃধার মেয়ে। আর অভিযুক্ত স্বামী সোহেল রানা উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার সবেদ আলীর ছেলে।
মঙ্গলবার নির্যাতিতা গৃহবধূ বাদী হয়ে থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।এর আগে রোববার রাতে মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার স্বামীর বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
পুলিশ ও নির্যাতিতার পরিবার জানান, তিন বছর আগে শাপলা খাতুনের সঙ্গে সোহেল রানার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার দেয়া হয় জামাইকে।
কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় শাপলার ওপর অমানুষিক নির্যাতন।
সর্বশেষ গত রোববার রাতে স্বামী সোহেল রানা যৌতুক হিসেবে শাপলাকে বাবার বাড়ি থেকে দেড় লাখ টাকা আনতে বলেন। কিন্তু বাবা গরিব অসচ্ছল হওয়ায় এত টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করেন স্ত্রী শাপলা।
আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী সোহেল রানা লাঠি দিয়ে স্ত্রীকে বেদম প্রহার করেন। অচেতন অবস্থায় কেটে ফেলা হয় মাথার চুল। জ্ঞান ফিরে পেয়ে শাপলা বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার বাবাকে জানান। শাপলার বাবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মণ্ডল-মাতব্বর সঙ্গে নিয়ে শাপলাকে পুলিশি সহায়তায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাপলা খাতুন জানান, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার সঙ্গে অসদাচরণ করতে থাকে। তারা কখনই স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা দেয়নি।পরিবারের সবাই আমাকে নানা অপবাদ দেয়।
গত ৩ মাস আগে আমার গর্ভে একটি সন্তান আসে। সেই সন্তানের কথা চিন্তা করেও তারা আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করে না। তাছাড়া স্বামী সোহেল রানা মাদকসেবী। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এসে প্রতিনিয়ত আমার ওপর নির্যাতন চালায়।
শাপলার বড় বোন রিক্তা খাতুন বোনের এমন নির্যাতনকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
মা হাসিনা খাতুন জানান, মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে সাধ্যমতো জামাইয়ের অনেক চাহিদা পূরণ করেছি। কিন্তু জামাই মেয়ের প্রতি অমানুষিক আচরণ করে। মেয়ের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে তা আমি মা হিসেবে সহ্য করতে পারছি না।
বাবা সাইফুল মৃধা জানান, আমি গরিব মানুষ কোনোমতে চাষাবাদ করে খেয়ে পরে বেঁচে আছি। এত অভাবের ভেতরও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সময়ে টাকা-পয়সা দিয়েছি। কিন্তু জামাই মেয়ের সঙ্গে ভালো আচরণ করে না। আমার মেয়ে সব সময় কষ্টে থাকে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান সাইফুল মৃধা।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও তাপস কুমার সরকার জানান, শাপলা শঙ্কামুক্ত। শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া ঘটনা পরপরই পুলিশ সদস্যরা শাপলাকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন