পরিবারের আশ্বাস ছিল জেএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারলে আপাতত বিয়ে দেবে না। তাই ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয় মর্জিনা। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের ধানীখোলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পেয়েছিল জিপিএ ৫।
কিন্তু কথা রাখেনি পরিবারের সদস্যরা। বারবার বিয়ের আলোচনা চলছিল। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা মর্জিনার বিয়ের সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। জানতে পেরে বিয়ের বিষয়ে নিজের মতামত পেশ করলেও তা উপেক্ষা করা হয়।
পরে বাল্যবিয়ে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় এ মেধাবী ছাত্রী। শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নিজ ঘরে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। মর্জিনা সহপাঠীদের মোবাইল ফোনে ঘুমের টেবলেট খাওয়ার কথা জানালে ভোরে তার বাড়ি গিয়ে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে বান্ধবীরা।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের ডামের মোড় এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। মর্জিনা ডামের মোড় এলাকার বাদশা মিয়ার কন্যা।
জানা গেছে, মর্জিনা বিয়েতে অসম্মতি জানালেও পরিবারের সদস্যরা তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সে নিজ ঘরে ২০টি ঘুমের ট্যাবলেট খায়। পরে তার বান্ধবীদের বিষয়টি জানালে সকালে সহপাঠী ফিমা, তিন্নি, যুথি, মুনিয়া, ফিমা, জবা, সুমী, ইপাসহ বাল্যবিবাহবিরোধী ব্রিগেড টিমের সদস্যরা বাড়িতে গিয়ে নিজেদের উদ্যোগেই প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়।
অবস্থার অবনতি ঘটলে পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। মর্জিনাকে হাসপাতালে নিতে প্রথমে তার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও বান্ধবীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। মর্জিনা বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের ৪ তলার ২৭নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
রোববার ঘটনাটি জানার পর হাসপাতালে ছুটে যান ধানীখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল্লাহ আসাদ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল বাহারসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।
মর্জিনা জানায়, আমি লেখাপড়া করতে চাই, লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চাই। নিয়ম আর সময় অনুযায়ী পরিবারের সিদ্ধান্তেই বিয়ে করব।
ধানীখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল্লাহ আসাদ জানান, মর্জিনা সুস্থ হয়ে এলে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন আমি করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজাফর রিপন জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। মর্জিনা সুস্থ হয়ে ফিরে এলে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন