প্রাইভেট কারের ধাক্কায় হতভাগা রিকশাচালকের ডান পা থেঁতলে যায়। পরে হাসপাতালে পাটি কেটে ফেলা হয়। তাঁর বাম পাও ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যাচ্ছে। মাতাল অবস্থায় কার চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। ওই গাড়িতে মদের বোতলও পাওয়া গেছে। কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান সড়কের তারাবনিয়ারছড়া কবরস্থান সড়কের মুখে রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আরও এক ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হয়েছেন।
রিকশাচালক আবদুল মালেক (৫৫) মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের আধারঘোনা এলাকার মৃত অলি আহমদের ছেলে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সোমবার ডান পা হারানো মালেকের অস্ত্রোপচার হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, অঝোরে কাঁদছেন রিকশাচালক মালেক। চোখের পানিতে হাসপাতালের বিছানা ভিজে যাচ্ছে। তিনি আহাজারি করে বলছিলেন, ‘হায় আল্লাহ তুমি একি করলে! আমার বোবা ছেলেটারে কে খাওয়াবে? আমার ঘরভাড়া কে দেবে?’
ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন মোহাম্মদ হোসেন (৩২) নামে কক্সবাজার শহরের এক ব্যবসায়ী। তিনি চিকিত্সাধীন রয়েছেন চকরিয়ার ডুলাহাজারা খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে।
রিকশাচালক মালেকের ভাই আবদুর রহিম জানান, গত তিন বছর ধরে মহেশখালী থেকে কক্সবাজার শহরে এসে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন মালেক। তিনি কক্সবাজার সাগরপাড়ের সমিতিপাড়ায় মাসে দুই হাজার টাকা ঘরভাড়ায় বসবাস করেন। তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ছেলের মধ্যে ছোটটা বাকপ্রতিবন্ধী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মালেক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রিকশাচালক মালেকের বাম পাও অবশ হয়ে যাচ্ছে। তাঁর স্ত্রী ধলু বিবি বিলাপ করে কাঁদছেন, ‘কি হবে আমার সংসারের। কে খাওয়াবে আমাদের।’ ধলু বিবি বলেন, ‘এখন হাতে এক টাকাও নেই। চিকিত্সার খরচ কিভাবে চালাব সেটাও ভেবে কূল পাচ্ছি না।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রাইভেট কারটি শহরের বার্মিজ স্কুল রোড থেকে বাসটার্মিনালের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় রিকশাচালক আবদুল মালেক তারবনিয়াছড়া কবরস্থানের মুখে রাস্তার পাশে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রাইভেট কারটি সজোরে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁর ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পাশে থাকা মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীও আহত হন।
এলাকাবাসী বলেন, প্রাইভেট কারটিতে শহরের ধনাঢ্য পরিবারের কয়েকজন সন্তান ছিলেন। তাঁরা মাতাল ছিলেন বলেও লোকজনের সন্দেহ। কেননা তাত্ক্ষণিক প্রাইভেট কারের আরোহীরা পালিয়ে গেলে গাড়ির ভেতর থেকে মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক হারুন বলেন, ‘আমি দুর্ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত পা বিচ্ছিন্ন রিকশাচালক এবং অপর আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে আবারও ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাইভেট কার জব্দ করি।’
তিনি বলেন, ‘ততক্ষণে এলাকার লোকজন প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে কিছু মালামাল নিয়ে গেছে। এসবের মধ্যে মদের বোতলও ছিল বলে শোনা গেছে।’ তিনি জানান, প্রাইভেট কারের মালিকের সন্ধান করা হচ্ছে।
আবদুল মালেক কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। আহত মোহাম্মদ হোসেনকে চকরিয়া মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধূরী বলেন, ‘আবদুল মালেকের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।’
কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনজার্জ (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দীন খন্দকার জানান, কারচালক পলাতক রয়েছে। তবে গাড়িটি জব্দ করা হয়। এ ব্যাপারে মামলা করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন