রানা প্লাজা ট্রাজেডির পাঁচ বছর পূর্তি হল আজ। দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এই শিল্প বিপর্যয়ে নিভে গেছে এক হাজার ১৩৭টি তাজা প্রাণ। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও দুই হাজার ৪০০ পোশাক শ্রমিক। সেদিন লাশের গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছিল গোটা সাভার। যা গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
ভবন ধসে পড়ার আগের দিনেই ধরা পড়েছিল বিশাল এক ফাটল। পরের দিন কাজে যোগ দিতে গিয়েও থেমে যান শ্রমিকরা। জোর করেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় মৃত্যুকূপে। এরপরই ঘটে স্মরণকালের ভয়াবহ এই শিল্প বিপর্যয়।
নয়তলা ভবনটি ধসে মুহূর্তেই দুই তলার সমান হয়ে যায়। ইট কংক্রিটে চাপা পড়ে হাজারও তাজা প্রাণ। বাঁচার জন্য আকুতি ছড়িয়ে পড়ে দেয়াালের কোণে কোণে। কারও মৃত্যু হয়েছে নিমিষেই, কেউ মারা গেছেন অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে।
ভবন ধসে পড়ার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় মানুষ। প্রাণপণ চেষ্টা শুরু হয় জীবন বাঁচানোর। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও নামেন উদ্ধার তৎপরতায়। টানা ২০ দিন চলে উদ্ধার অভিযান। প্রাণে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা যখন ক্ষীণ হয়ে যায় তখনি শুরু করা হয় যান্ত্রিক উদ্ধার অভিযান।
ঘটনার ৫ বছর পরেও সেই বিভীষিকার কথা মনে পড়লেই আঁতকে ওঠেন আহত শ্রমিকরা। এদের একজন ফরিদপুরের আসমা। বর্তমানে এ্যামট্রানেট গার্মেন্টেসের সুইং সেকশনের কর্মী। অন্ধকার ধ্বংসস্তূপেই টানা চার দিন আটকে থেকেছেন হতভাগ্য এই পোষাক শ্রমিক। দূর্বিষহ সেই স্মৃতি এখনও তাড়া করে আসমাকে।
আসমা বলেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রানা প্লাজার সেই স্মৃতি আমি ভুলতে পারব না। টানা এক বছর আট মাস আমি কোনো কাজ করার সাহস পাইনি। বারবার কাজে ফিরতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মায়ের কষ্ট দেখে আবার পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছি। সকালে কাজে যোগ দেয়ার জন্য কারখানার সিঁড়িতে পা ফেলতেই সেইসব দিনের কথা মনে ভেসে ওঠে বলে জানান আসমা।
রানা প্লাজা ধসে শ্রমিকদের প্রাণহানির পাশাপাশি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন-যাপনের কাহিনী। ফল হিসেবে অনেক বিদেশি ক্রেতাই অসন্তষ্ট হন পোশাক মালিকদের উপর। আমেরিকার মত বড় বাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা হারায় বাংলাদেশ।
রানা প্লাজার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপারে সরকার ও পোশাক মালিকদের চাপ দিতে থাকে বিদেশি ক্রেতারা। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এই খাতটিকে বাঁচাতে বিভিন্ন পরিকল্পনাও নেয় সরকার। তবে পাঁচ বছর যেতে না যেতেই রানা প্লাজার সেই স্মৃতি ভুলতে বসেছে সরকার ও পোশাক মালিকরা। কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি ক্রেতাদের অসন্তোষ রয়ে গেছে এখনও।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন