বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পিটুনির শিকার কথিত ছাত্রলীগ নেত্রী ফারজানা আক্তার ঝুমুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার কথা না শুনলে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাও বিরল নয়। তার আরেক কৌশল ছিল বাড়িতে ফোন করে মেয়েদের নামে নিন্দা করা।
যদিও তিনি ছাত্রলীগের পরিচয় দিতেন, তারপরও সংগঠনের নেতারা জানান, মেয়েটিকে তারা চেনেন না। বহু দিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে এবার তার বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে মেয়েরা।
রবিবার সন্ধ্যায় বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের সাধারণ ছাত্রীরা ওই তরুণীকে ধোলাই দেয়ার পাশাপাশি তার কক্ষের আসবাবপত্র রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। সড়ক অবরোধ করেও বিক্ষোভ করে সাধারণ ছাত্রীরা।
বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের একাধিক আবাসিক ছাত্রী জানান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ফারজানা আক্তার ঝুমুর আগে কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী হেনা আক্তারের সঙ্গে রাজনীতিতে অংশ নিতেন। পরে হেনা হল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভোল পাল্টে ফেলেন ঝুমুর। তিনি ক্ষমতাবান ছাত্রলীগ নেতাদের নাম ব্যবহার করতে শুরু করেন।
হেনার পর ঝুমুর নগরীর ২০নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ও বিএম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা রুবায়েত সাজ্জাদ পিয়ালের নাম ব্যবহার করে তার প্রভাব বিস্তারের কাজ শুরু করেন। পিয়াল বরিশাল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা খায়রুল হাসান সৈকতের ছত্রছায়ায় রাজনীতি করেন ঝুমর।
সবশেষ ঝুমুর বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত ও আতিকুলল্লাহ মুনিমের নাম ব্যবহার শুরু করেন। তবে এসব বিষয়ে এই ছাত্রলীগ নেতারা ঝুমুরের বিষয়টি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। এমনকি এই তরুণীকে চেনেন না বলেও জানান বেশ কয়েকজন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ছাত্রীনিবাসে ঝুমুরের কথা না শুনলে নানা ধরনের হয়রানি এমনকি হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হতো। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, মেয়েদের বাড়িতে ফোন করে দুর্নাম ছড়াতো। এ কারণে একজনের পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে। ঝুমুর হোস্টেলে মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ তাদের।
বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের আবাসিক ছাত্রী জান্নাতুল মীম বলেন, ‘ঝুমুরের কথা মত না চললে সে আমাদের বাড়িতে ফোন করে উল্টো পাল্টা কথা বলত। এখনো বলে। তবে এর মধ্যে এক ছাত্রীর বাড়িতে ফোন দিয়ে নানারকম অশ্লীল কথাবার্তা বলায় বাড়ির লোকজন তার পড়াশুনা বন্ধ করে দেয়।’
এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঝুমুরের বিরুদ্ধে বহু আগ থেকেই নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে কলেজ ছাত্র কর্ম পরিষদের কতিপয় অতি উৎসাহী নেতার কারণে কলেজ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া সব জায়গায় সে মহানগর আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ বলে প্রচার করে ফায়দা লুটতে চাইতেন।
‘নির্যাতনের শিকার হয়ে এর আগেও ঝুমুরের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। তবে কোনো কিছুতেই কিছু করতে পারেনি প্রশাসন।’
আবাসিক ছাত্রী ঐশী জানান, ‘ছাত্রলীগের ঐতিহ্য বহণ করে যে ছাত্রীরা ছাত্র রাজনীতি করত তারাই ছিল ঝুমুরের মূল শত্রু। বরিশাল রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদলের কারণে ঝুমুর তাদের উপর ধীরে ধীরে নির্যাতনের মাত্রাও বাড়াতে থাকে। একপর্যায়ে সাধারণ ছাত্রীরা একত্রিত হয়ে পুনরায় কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ঝুমুরের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি ও অভিযোগ দেয়। ওই অভিযোগ দেয়ার খবর পেয়ে ঝুমুর আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়ার কৈফিয়ত চায় এবং বেশ কয়েকজন নিরীহ ছাত্রীকে মারধর শুরু করে।’
‘এক পর্যায়ে সাধারণ ছাত্রীরা পুনরায় একত্রিত হয়ে ঝুমুরের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। তার আসবাবপত্র রুম থেকে রাস্তায় নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর তার বহিষ্কারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়।’
তবে ছাত্রীদের করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঝুমুর। গতকাল ঢাকাটাইমসকে ঝুমুর বলেছিলেন, মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় তার উপর হামলা করা হয়েছে।
এই বিষয়ে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম জানান, ‘অনেক আগেই শুনেছি ঝুমুর নামের মেয়েটি আমাদের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করছে। তবে এর আগে হোস্টেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাকেসহ তার পুরো গ্রুপটিকেই হল থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে কীভাবে হলে উঠেছে সেটা জানা নেই। তবে এরা কেউ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে, অকল্যাণে নয়।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন