পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে কোনমতেই থামছে না অপহরণ বাণিজ্য। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মাঝেও অপহরণের ঘটনায় বর্তমানে সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ যাবৎ অপহরণকারী চক্রটির জালে আটকা পড়ে ব্যবসায়ী, ধনী পরিবারের স্কুল কলেজ পড়ুয়া সন্তান, কৃষক, গাড়ি চালকসহ অনেকে। অপহরণ চক্রটিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চিহ্নিত করলেও সহজেই তাদের হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পুলিশ বলছে, অপহরণকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। এতে করে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে।
সূত্র মতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঈদগাও, ঈদগড়, নাপিতখালী, কালিরছড়া, কাউয়ারখোপ, করলিয়ামুরা, বাইশারী, বড়বিল-থোয়াঙ্গাকাটা কেন্দ্রিক অন্তত শতাধিক সদস্যের একটি অপহরণকারী চক্র বাইশারী-দোছড়ি ও ঈদগড় এলাকা থেকে অপহরণ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও এ চক্রটি মাঝেমধ্যে কৌশল পাল্টিয়ে অপহরণ ও জিম্মি করার উদ্দেশ্যে ভিকটিমকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে চাহিদামত মুক্তিপন আদায় করে। এভাবে গত এক বছরে কোটি টাকার উপর মুক্তিপণ আদায় করেছে অপহরক সিন্ডিকেটটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইতিপূর্বে অপহরণকারীদের হাত থেকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে আসা এক ব্যক্তি জানান, অপহরণকারী চক্রটির সাথে স্থানীয় লোকজন জড়িত থাকায় প্রশাসন তাদেরকে আটক করতে ব্যর্থ হয়। এছাড়াও জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে অনেকে প্রকৃত অপহরণের ঘটনা জনসম্মুখে প্রকাশ করে না।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সালেল ১১ অক্টোবর বাইশারী ইউনিয়নের ব্যাঙডেবা এলাকা থেকে মো. ইউনুছ, মো. করিম, মো. আবু বক্করকে অপহরণ করা হয়। পরে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট লম্বাবিল এলাকা থেকে হাফেজ রশিদ উল্লাহ, ২০১৬ সালের ১ মে দোছড়ি ইউনিয়নের ওয়াচ্ছাখালি থেকে বুলবুল আক্তার (১১), ১২ আগস্ট বাইশারী ইউনিয়নের রাঙ্গাঝিরি থেকে মিজানুর রহমান, একই মাসে দোছড়ি ইউনিয়নে লংগদু থেকে ফরিদুল আলম, মো. হুমায়ুন কবির, বড়ইচর এলাকা থেকে জালাল উদ্দিন, আবদুল কাদের, ২৩ অক্টোবর পিএইচপি রাবার বাগানের ৮নং ব্লক থেকে আজিজুল হক, নুরুল আলম, আবদু শুক্কুর, ২৪ আগস্ট বাইশারী-ঈদগড় সড়কে মো. রাশেদ, নেজাম উদ্দিন, হাবিবুর রহমান, ৪ ফেব্রুয়ারি বাইশারী ইউনিয়নের লেদুরমুখ থেকে ছালেহ আহামদ ও রাজিব, ৩০ এপ্রিল বাইশারী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি চাইল্যাতলী থেকে মো. শাহজালাল, ৫ মে ঈদগড় বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে রাঙ্গাঝিরি যাওয়ার পথে মিজানুর রহমান, ২১ নভেম্বর ঘুমধুম জামতলী পাড়া থেকে মো. হোছন, নুরুল আজিম, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি লেদুখাল এলাকা থেকে আবদুর রহিম, আবু ছৈয়দ, আবদুল আজিজ, শাহ আলম, গত বছরের ২১ নভেম্বর বাকখালী মৌজার ছাগলখাইয়া থেকে নুরুল আজিম, মো: হোছন, ও কাগজিখোলা থেকে ছৈয়দ বাবর (৩০), সর্বশেষ গত ১৭ এপ্রিল দোছড়ি লংগদুর মুখ থেকে সাইফুল ইসলামসহ অন্তত শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দাকে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করেছে এ সিন্ডিকেটি।
অনেক সময় অপহরণকারীদের কবলে পড়ে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত না করে প্রাণভয়ে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড় পান। অপহরণকারী চক্রটি কাউকে অপহরণের পর নিজেদের ফোন ব্যবহার না করে ভিকটিমের মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের হুমকি ও বিকাশ একাউন্টে মুক্তিপণ আদায় করে। ফলে অপহরণকাদের চিহ্নিত করতে কঠিন হয়ে পড়ে পুলিশের।
এ প্রসঙ্গে বাইশারীতে অপহৃতদের উদ্ধারে একাধিক অভিযানে অংশ নেয়া এসআই আবু মূসা জানান, তিনি যোগদান করার পর বাইশারীতে তেমন অপহরণের ঘটনা হয়নি। তবে চিহ্নিত অনেক অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। পাহাড়ের ভৌগোলিকগত কারণে অপহরণকারীদের আটক করতে সত্যিকারার্থে হিমশিম খেতে হয়। তারপরেও বিভিন্ন বাধা উপক্ষো করে বাইশারী ও ঈদগড় অঞ্চলে চিহ্নিত অপহরণকারীদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন