টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার জেরা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়ার আদালতে মামলার প্রধান আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার উপস্থিতিতে জেরা শুরু হয়।
মামলার বাদি ও নিহতের স্ত্রী নাহার আহম্মেদকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকি মিয়া ও ফাইজুর রহমান। প্রায় দুই ঘন্টা তাকে জেরা করা হয়। জেরা অসমাপ্ত রেখে দুপুরে আদালত মুলতবি ঘোষণা করেন বিচারক। বুধবার পুনরায় জেরা করা হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সূত্র ধরে আসামিপক্ষের আইনজীবী বাদিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। ওই সম্মেলনে কে কে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন বাদিকে তা জিজ্ঞাসা করেন আইনজীবী। এছাড়াও জানতে চাওয়া হয় হত্যাকান্ডের সংবাদ পেয়ে কে কে বাসা থেকে বের হন।
এসময় নাহার আহম্মেদ আদালতকে জানান, কাউন্সিলর শামীম, সুরুজ ও অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি ও শামীমের ভাই স্বাধীন সেখানে ছিল। স্বাধীন ছাড়া আর সবাই ফারুক আহম্মেদকে হাসপাতালে নিয়ে যান। জেরায় বাদি উল্লেখ করেন হত্যাকাণ্ডের একদিন আগে এমপি রানা ও তার ভাইয়েরা ফারুক আহম্মেদকে হুমকি দিয়েছিলেন। আইনজীবী প্রশ্ন করেন এ বিষয়ে তিনি থানায় কোন জিডি করেছিলেন কিনা। বাদি না সুচক জবাব দেন এবং বলেন তারা এত ভয়ংকর ছিল থানায় যাওয়ার সাহস পায়নি।
এছাড়াও আইনজীবী জানতে চান ফারুক আহম্মেদের শরীরে রক্ত কোথায় পাওয়া যায়। উত্তরে বাদি বলেন পেছনে বাম কাঁধের নীচে সমস্ত শরীরজুরে রক্ত ছিল।
এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, এজাহারে এমপি রানার নাম ছিল না। উদ্যেশ্যমূলকভবে এই মামলায় এমপি ও তার ভাইদের জড়ানো হয়েছে।
গত সোমবার বিকেলে এমপি রানাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-১ থেকে টাঙ্গাইল কারাগারে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে টাঙ্গাইল কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। দীর্ঘ সময় কাঠগড়ায় দাড়িয়ে থাকায় রানা অসুস্থ্যবোধ করলে আদালতে অনুমতি নিয়ে তিনি চেয়ারে বসেন। এমপি রানার ফাঁসি চেয়ে আদালত চত্বরে মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
অতিরিক্ত সরকারি কৌসুলী মনিরুল ইসলাম খান জানান, কারাগারে আটক আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী ও মোঃ সমিরকে আদালতে হাজির করা হয়। একই সাথে জামিনের মুক্ত থাকা অপর তিন আসামি মাসুদুর রহমান, ফরিদ আহম্মেদ ও নাসির উদ্দিন নুরুও আদালতে হাজির হন। এ মামলায় সাতজন আসামী পলাতক রয়েছে।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ফারুক আহমদ শহরের কলেজপাড়ায় নিজ বাসার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনার দুইদিন পর তার স্ত্রী বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন এসআই অশোক কুমার সিংহ (পিপিএম) এ হত্যাকান্ডে এমপি রানা ও তার ভাইদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পান।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এমপি রানা, তার ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত্ম কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক গোলাম মাহফীজুর রহমান।
এরপর ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এমপি রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। নয়বার তারিখ পেছানোর পর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর দন্ডবিধির ৩০২/ ১২০/৩৪ ধারায় সংসদ সদস্য রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন আদালত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন