২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করার পর থেকে জোটে অনীহা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। এরপর থেকে প্রতি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন এককভাবে করার চেষ্টা করেছে দলটি।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে অংশগ্রহণ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১.০৫ শতাংশ ভোট লাভ করে। প্রস্তুতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত বহুল আলোচিত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনেও অংশ নেয় নি দলটি। তবে এ নির্বাচনে এককভাবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছিলো তারা।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’। ইতোমধ্যে ২২৯ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি।
সম্প্রতি দলের মজলিসে আমেলার বৈঠকে এ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
বাকি আসনগুলোর প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম শিগগিরই শেষ হবে বলে আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব ও প্রার্থী বাছাই কমিটির সদস্য মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে বলি। তাদের প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে বাছাই কমিটি দলের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে নাম প্রস্তাব করেছেন। দলের আমির ও নায়েবে আমিরগণসহ উচ্চতর কর্তৃপক্ষ তা চূড়ান্ত করেছে।
সাবেক এ ছাত্র নেতা আরও জানান, প্রায় ১ বছর যাচাই-বাছাই করে প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে দলের সংশয় এখনও দূর হয় নি।
দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘সরকারের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনে অংশগ্রণ করবে কি করবে না। নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হলে ইসলামী আন্দোলন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিবে। কোনো ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নিবে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জোটবদ্ধ রাজনীতি থেকে বিমুখ কেনো? মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা ঐক্য বিরোধী নই। ঐক্য প্রয়াসী। কিন্তু দলের আদর্শ, চেতনা ও উদ্দেশ্য বিসর্জন দিয়ে তো জোট করা যায় না!
আমরা দেখছি, জোটবদ্ধ রাজনীতির অর্থ দাঁড়িয়েছে বড় দুটি দলের লেজুরবৃত্তি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখবেন লেজুরবৃত্তির রাজনীতি করে ইসলাম ও মুসলমানের কোনো ধরনের কল্যাণ অর্জন করা যায় নি।’
অন্যদিকে সংশয়ের ভেতরই ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিবে বলে জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আহমদ আবদুল কাইয়ুম।
তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ শেষ পর্যন্ত কেমন হবে তা নিয়ে বাংলাদেশের সব দলেরেই সংশয় আছে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে সবাই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরাও নির্বাচনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। ’
ইতিমধ্যে অধিকাংশ প্রার্থী গণসংযোগমূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন বলেও জানিয়েছেন এ নেতা।
গাজী আতাউর রহমান জানিয়েছেন, প্রার্থী বাছাইয়ে তারা দলের সঙ্গে প্রার্থীর সম্পৃক্ততা, তাকওয়া, শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান, স্থানীয় পর্যায়ে জনভিত্তি ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় পর্যায়ের প্রায় সব নির্বাচনে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে ইসলামী ধারার এ দলটি। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকটি সাফাল্য ব্যতীত তেমন ফল ঘরে তুল পারি নি তারা। সেখানে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার যৌক্তিকতা কী?
গাজী আতাউর রহমানের ভাষায় ‘আমাদের কর্মীদের মধ্যে কোনো হতাশা নেই। আমাদের কোনো পর্যায়ে কোনো হতাশা নেই। আমরা রাজনীতি করি ইবাদত হিসেবে। সারা জীবন নামাজ আদায় করে কেউ যদি দুনিয়া কিছু না পায় তাহলে যেমন সে হতাশ হয় না। তেমন আমাদের কোনো হতাশা নেই।’
দলীয় নেতাদের দাবি অতীতের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার আরও ভালো ফলাফল লাভের চেষ্টা করছে তারা। যেমন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের বছরজুড়ে গণসংযোগমূলক কার্যক্রম, জাতীয় দুযোগে দলীয়ভাবে ব্যাপক অংশগ্রহণ ও প্রচার, নিছক ধর্মীয় ইস্যুর বাইরে গণসম্পৃক্ত বিষয়ে দলীয় কর্মসূচি ইত্যাদি।
এবারের নির্বাচনী কৌশলের মধ্যে রয়েছে সংসদীয় আসনগুলো এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা। ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও জয়লাভের ব্যাপারে জোর চেষ্টা করা হবে দলের পক্ষ থেকে। এর সংখ্যা ৩০ জনের মতো হতে পারে। বাকি আসনগুলো ক্যাটাগরি ভিত্তিক গুরুত্ব পাবে।
দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচনে অংশ নিবেন দলের নায়েবে আমির ও মহাসচিব।
মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ প্রার্থী হবেন খুলনা-৪, নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বরিশাল-৫, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী ঢাকা-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এছাড়া চরমোনাই পীরের আরেক ভাই সৈয়দ এছহাক মো. আবুল খায়ের বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ আসনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন