উগ্রপন্থিদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসি এলাকায় প্রকাশ্যে আমার ছেলে খুন হয়। এরপর কেটে গেল তিনটি বছর। এখন পর্যন্ত তদন্তকাজই শেষ হলো না। তাহলে আমি আমার ছেলের খুনের বিচার কিভাবে আশা করব? ছেলে হত্যার বিচার নিয়ে এভাবেই নিজের হতাশার কথা জানালেন বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বাবা শিক্ষাবিদ অজয় রায়।
মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার। দিনটিকে সামনে রেখে পরিবর্তন ডটকমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অজয় রায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, তিনটি বছর কেটে গেছে, এখনও মামলার তদন্তকাজেরই তেমন কোনো অগ্রগতি ঘটেনি। তদন্ত কর্মকর্তারা শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বার বার একই কথা বলছেন যে, শিগগিরই চার্জশিট দেয়া হবে। আমি এখন বিরক্ত হয়ে তাদের কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
সন্তান হারানো এই বাবা বলেন, যারা তদন্ত করছেন, হয় তদন্তকাজ শেষ করার তাদের কোনো ইচ্ছা নাই, নয়তো তাদের কোনো অপারগতা বা অসামর্থ্যতা রয়েছে। তদন্তকাজই এখনও শেষ হয়নি, তাহলে আমি আমার ছেলের খুনের বিচার কিভাবে আশা করবে? এছাড়া এখন আর আমার কি বলার আছে!
অপরাধীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কাজ শেষে যতদ্রুত সম্ভব অপরাধীদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারের ব্যবস্থা করলেই আমি সন্তুষ্ট হব। শুধু অভিজিতের বাবা হিসেবে নয়, একজন যে কোনো বিচারপ্রার্থী হিসেবে আমার এই একটাই চাওয়া।
অজয় রায় বলেন, তারা কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পর আদালত কি করবেন সেটা মাননীয় আদালতের ব্যাপার। তাদের যদি শাস্তি ঘোষণা করা হয়, তাহলে তারা শাস্তি পাবে। যদি নিরপরাধ ঘোষণা করা হয় তাহলে মুক্ত হয়ে যাবে। আর কি বলার আছে, এখন শুধু হতাশা ব্যক্ত করতে পারি। এছাড়া আমার আর কিছুই করার নাই।
তিনি বলেন, প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতারের পর মামলার চার্জশিট দিতে হবে এটা কেমন কথা? তাদের অনুপস্থিতিতেও চার্জশিট দেয়া যেতে পারে। এতে অন্তত বিচার কাজটা শুরু হবে। অথচ পুলিশ বলছে- তারা খুনিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। তাদের গ্রেফতারের পরই চার্জশিট দেয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, উগ্রপন্থীরা শুধু অভিজিৎকে হত্যা করেনি, দেশের তরুণ উদীয়মান লেখককে হত্যা করেছে। অভিজিৎ বেঁচে থাকলে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতো। শুধু আমার ছেলেই নয়, তারা আরো অনেক মুক্তমনা লেখককে হত্যা করেছে। তারা বাংলাদেশকে একটি ভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে।
গত ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন অভিজিৎ।
ওই ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন অভিজিতের বাবা অধ্যাপক ড. অজয় রায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন