দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড বিএনপির বিভিন্ন অংশকে ঐক্যবদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে খালেদা অংশ নিতে না পারলেও দলে তার মনোনীত নেতাকেই মেনে নেবে সবাই।
সম্প্রতি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত তুলে ধরে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক গণমাধ্যম ব্যানার নিউজ।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি মামলায় তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ বছর কারাদণ্ড হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তার পুত্র তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ঘোষণা করেছে। একই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৫৩ বছর বয়সী তারেক বর্তমানে লন্ডনে নির্বাসনে রয়েছেন।
ব্যানার নিউজ যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, সেসব বিশ্লেষকদের মত, আগামী নির্বাচনে জিতলেও আদালতের রায়ের কারণে তারা দুইজন প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে খালেদা দলের একতার প্রতীক। তার কারাদণ্ড বিএনপিকে চাঙ্গা করেছে। এতে বাংলাদেশের ১১তম সাধারণ নির্বাচনে বিএনপির জেতার সম্ভাবনা বেড়েছে।
আগামী নির্বাচনের জন্য দলের মধ্য থেকে বিশ্বস্ত নেতাদেরই বেছে নেবেন খালেদা এবং দলের অন্য নেতারাও তাদের মেনে নেবেন বলেও তাদের।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খালেদার কারাদণ্ড ও তাদের রহমানের অনুপস্থিতি নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। খালেদা এখনো দেশেই রয়েছেন। জেল থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে তার কোনো সমস্যা হবে না।
এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি প্রত্যাখ্যান করায় ভোটের আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে এবারের নির্বাচনে আসবে দলটি। এমনকি রাজপথে সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে- খালেদার রায়ের পর এমন কর্মসূচি থেকেও বিরত থেকেছে দলটি।
খালেদার রায়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বিরোধী নেতারা।
এর আগে বিএনপির সিনিয়র নেতা ও প্রখ্যাত আইনজীবী মওদুদ আহমেদ জানিয়েছেন, হাইকোর্টে দুটি পিটিশন করবেন তারা। একটি খালেদার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ও অন্যটি অভিযুক্তদের জামিন চেয়ে।
অবশ্য আদালত জামিন দিলেও আগামী নির্বাচনে খালেদা অংশ নিতে পারবেন কি না- এ নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, ‘অবস্থা যাই হোক, বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে আসবে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে তারা খালি মাঠে ছেড়ে দেবে না।’
আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া দলের মহাসচিব বা স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্যকে নেতা হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন বলেও মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, বিএনপির প্রধান দুই অংশ হিসেবে পরিচিতদের- উদারপন্থী ও রক্ষণশীল- ঐক্যবদ্ধ করেছে। তার মন্তব্যের সঙ্গে একমত আতাউর রহমানও।
শান্তনু মজুমদার মনে করেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি অহিংস আন্দোলনই চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘সরকার চাইছে বিএনপি রাজপথে সহিংসতা করুক। যদি তারা এটা করতো, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও পুলিশ তাদের আর দাঁড়াতে দিতো না, যেমনটা অতীতে হয়েছে।’
এই রাজনৈতিক বিশ্লষক আরো বলেন, ‘বিএনপি জানে আগামী নির্বাচনে ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের ভালো অবস্থান আছে। সুতরাং তারা রাজপথে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে যাবে, যাতে আরো বেশি নেতাকর্মী রাস্তায় আসার সাহস পায়।’ এতে মানুষের কাছে বিএনপির একটি গঠনমূলক চিত্র ফুটে উঠবে বলেও মনে করেন তিনি।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন