আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ বেঁধে তুলে নেওয়ার ৬ মাস পর ফিরলো বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার মো. সোহেল খান।
তিনি ৬নং চিংড়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য) ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
তাকে গত বছরের ১৭ জুলাই বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে এই ৬ মাস গুম থাকারপর সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তিনি বাসায় ফিরেছেন।
তবে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ তাকে তুলে নেয়ার কথা স্বীকার করেনি।
তার ফিরে আসার বিষয়টি মঙ্গলবার দুপুরে পরিবর্তন ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন সোহেল খানের ছোট ভাই মো. রুবেল খান।
তবে, তার আচরণে ভয় ও আতঙ্কের ছাপ দেখতে পেয়েছেন বলে জানালেও এতদিন তিনি কোথায় এবং কাদের হেফাজতে ছিলেন, সে বিষয়ে কোন তথ্য দেননি তিনি।
তিনি বলেন, ভাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করে বাড়িতে ফেরেন। এ সময় তাকে দেখে পরিবারের সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। খুশিতে কেঁদে ফেলেন সবাই। তবে ভাইকে কারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল এবং কোথায় রেখেছিল, সে বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলেও তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলেননি। যে কারণে তারা আর জোর করেননি।
যেখানে ভাই আদৌ বেঁচে আছে কিনা সেটিই তারা জানতেন না, সেখানে সুস্থ অবস্থায় ভাই ফিরে এসেছে এতেই আমরা খুশি। তবে, বাড়িতে সবার সঙ্গে দেখা করে সোহেল খান আবার বেরিয়ে যান বলেও জানান তিনি।
সোহেল খানের বৃদ্ধা মা রাহিলা বেগম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন কাঁদতে কাঁদতে সময় কেটেছে আমার। এখন হারানো ধনকে ফিরে পেয়ে আল্লাহ’র শুকরিয়া আদায় করছি।
তিনি বলেন, ছেলে সোহেল সোমবার রাতে বাড়িতে আসার পর অল্প সময়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। এ সময় তিনি কোথায় ছিল- জিজ্ঞাসা করলে সোহেল জানায়, সে ভারতে ছিল। এর বেশি কিছু বলেনি। কিন্তু নিরাপত্তার অভাব থাকায় সে বাড়ি থেকে বের হয়ে অন্য স্থানে চলে যাওয়ায় আর কথা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের একটি মারামারি মামলায় ইউপি সদস্য সোহেল খানের ৫ বছরের সাজা হয়। ওই মামলায় আত্মসমর্পনের জন্য গেল বছরের ১৭ জুলাই তিনি বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এলাকায় যান। ওইদিন সকাল আনুমানিক পৌনে ১১ টায় তিনি বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের দ্বিতীয় তলায় অ্যাডভোকেট মিলন ও অ্যাডভোকেট পিকলুর চেম্বারে বসা ছিলেন। সেখান থেকে তার বন্ধু লিয়ন শিকদার চা খাওয়ার জন্য ডেকে সমিতির লাগোয়া সীমানা প্রাচীরের পাশে আলমগীরের হোটেলে নিয়ে যান। সঙ্গে ছিল অপর বন্ধু সৌরভ, নয়ন বক্স, রিয়াত তালুকদার ও চাচাতো ভাই রাব্বি।
এ সময় পিস্তল হাতে ৭/৮ জন লোক সিভিল পোশাকে ওই হোটেলে গিয়ে নাম সম্বোধন করে সোহেলকে ডাকতে থাকে।
পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তারা ‘কত বড় গুন্ডা হইছিস’ বলে কলার ধরে সোহেলকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বন্ধুরা পরিচয় জিজ্ঞাসা করায় তারা ‘প্রশাসনের লোক’ বলে পরিচয় দেয়। এরপর টেনে হেঁচড়ে বের করে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে হাতকড়া পড়ায়। পরে পাশ্ববর্তী সরদার বাড়ির বাগানের মধ্য দিয়ে খারদ্বার রোড (ভিআইপি) দিয়ে লিয়ন শিকদার ও সৌরভকেসহ বাগেরহাট জেলা কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কালো মাইক্রোতে করে তুলে নিয়ে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর বন্ধু লিয়ন ও সৌরভকে দশানীর মোড়ে নামিয়ে দিয়ে সোহেলকে নিয়ে তারা চলে যায়। এরপর থেকে সোহেল খান নিখোঁজ ছিলেন।
ঘটনার পরদিন তার স্ত্রী মুন্নী বেগম বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এছাড়া থানায় জিডি এবং মামলা করতে গেলে পুলিশ নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সোহেল খানের চাচাতো ভাই মো. রাব্বি খান বলেন, তুলে নেওয়ার সময় তিনি বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তার কাছ থেকে দু’টি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা। এরপরও তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে পিস্তল দিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। এমনকি তাকে পা দিয়ে আঘাতও করা হয়। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা র্যাব অথবা ডিবিকে দিয়ে তাকে গুম করাতে পারে।
সোহেল খানকে গুমের বিষয়ে র্যাব-৬ খুলনার পরিচালক, অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, সোহেলের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে পরিবারের সদস্যরা তার কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু র্যাব-৬ তাকে আটক করেনি। তার ফিরে আসার বিষয়টিও তাদের জানা নেই বলে জানান তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন