ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। সড়কের সাতকানিয়া অংশের কেরানীহাট বাসস্ট্যান্ড। নানা ধরনের যানবাহনের ভিড়ে চোখ আটকে যায় যাত্রীবাহী একটি পিকআপ ভ্যানের দিকে। এর ভেতরে চালকের আসনে বসে আছে এক কিশোর। বয়স বড় জোর ১৫। তার সহকারীর বয়স তো আরও কম। বিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়সেই এই শিশু-কিশোরেরা হাতে তুলে নিয়েছে গাড়ির স্টিয়ারিং। ।
এ রকম অন্তত ৫০ শিশু-কিশোর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে লোহাগাড়ার আমিরাবাদ থেকে সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও পটিয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পিকআপ ভ্যান নিয়ে যাত্রী আনা-নেওয়ার কাজ করছে।
যাত্রীরা জানায়, কম বয়সী এসব চালকেরা গাড়ি চালায় বেপরোয়া গতিতে। প্রায়ই অন্য গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালাতে চায় তারা।
গত শনিবার সকালে কেরানীহাটে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য অপেক্ষা করছিল চালক মো. নুরুদ্দীন। জানতে চাইলে সে তার বয়স ১৫ বলে দাবি করে। কিন্তু তার গাড়ি চালানোর কোনো লাইসেন্স নেই। নুরুদ্দীন জানায়, সে বয়স বাড়িয়ে অনলাইন জন্মনিবন্ধন তৈরির চেষ্টা করছে। জন্মনিবন্ধন পেলে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স বানাতে পারবে।
একই সময়ে অন্য একটি গাড়িতে যাত্রী ওঠানোর জন্য ডাকাডাকি করছিল ১০ বছর বয়সী মোহাম্মদ রবিউল।
কিশোর চালকের গাড়িতে ওঠা যাত্রী মতিউর রহমান বলেন, চাকরির জন্য তাঁকে প্রতিদিন লোহাগাড়ার পদুয়া থেকে দোহাজারী আসা-যাওয়া করতে হয়। মহাসড়কে লোকাল বাস কমে যাওয়ায় ঝুঁকি জেনেও কম বয়সী চালকের গাড়িতে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন।
কেরানীহাট যাত্রীবাহী পিকআপ ভ্যান মালিক ও চালক সমিতির সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ছালেহ বলেন, মহাসড়কে তিন শয়ের মতো যাত্রীবাহী পিকআপ ভ্যান চলাচল করে। এর মধ্যে অধিকাংশ চালকের কোনো লাইসেন্স নেই। চালকদের মধ্যে ৫০ জনেরও অধিক চালক কিশোর বয়সী হবে।
যাত্রীবাহী পিকআপ ভ্যানের মালিক আবদুল মালেক বলেন, মহাসড়কে যে পরিমাণ গাড়ি আছে, সে তুলনায় চালক নেই। বাধ্য হয়েই মালিকেরা লাইসেন্সবিহীন কম বয়সী চালকদের গাড়ি দিচ্ছেন। আরেক মালিক নুরুল আবছার বলেন, কম বয়সী চালকের হাতে গাড়ি দিয়ে এক বছরে তিনবার ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গাড়ির বেশ ক্ষতি হয়েছে।
কেরানীহাট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম হোসেন সবুজ প্রথম আলোকে বলেন, কিশোর চালকদের হাতে গাড়ি না দিতে মালিকপক্ষকে প্রায়ই সতর্ক করা হচ্ছে। তারপরও মাঝেমধ্যে কয়েকজন কিশোরকে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। কিশোর চালক দেখলে নিয়মিত মামলা দেওয়া হচ্ছে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চালকদের লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্রের বিষয়ে নিয়মিত অভিযান চালায় হাইওয়ে পুলিশ। এ ছাড়া মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন