প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বাওড় (জলাশয়) ঘিরে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামের অবস্থান। গ্রামের ২০ হাজার মানুষের পারপারের ভরসা খেয়া নৌকা। ফলে বিপদে আপদে জরুরী প্রয়োজনে বিড়ম্বনার শেষ থাকে না ভুক্তভোগীদের। দীর্ঘদিন ধরেই পারাপারের বিড়ম্বনায় ভুগছে এলাকাবাসী। একটি সেতুর প্রয়োজনীয়তা বহুদিন ধরে অনুভব করলেও এগিয়ে আসেনি কেউ। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে এগিয়ে এসেছে ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। এলাকার যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলা সংগঠনের ব্যানারে বাওড়ে ভাসমান সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
.
সংগঠনের সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রম ও অর্থায়নে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে দেশে প্রথম প্লাস্টিকের ব্যারেল ও লোহার শীটের সমন্বয়ে নির্মিত হচ্ছে প্রায় ১৩শ ফুট দীর্ঘ ভাসমান সেতু। নতুন বছরের শুরুতে ওই ভাসমান সেতু চালু হবে। আর এতে করে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের বিড়ম্বনার অবসান হবে বলে আশাবাদী উদ্যোক্তারা।
জানা যায়, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন দেশের বৃহত্তর জলামহল ঝাঁপা বাওড় বেষ্টিত ঝাঁপা গ্রাম। কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী মল্লিকপুর গ্রাম থেকে বাওড়টির উৎপত্তি। প্রায় ৬ কি মি দৈর্ঘ্যের বাওড়টি প্রায় ৩ বর্গ কি মি ঝাঁপা গ্রামকে বেষ্টিত করেছে।
ওই গ্রামেরই আরেক প্রান্ত কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী লক্ষিকান্তপুর গ্রামে গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার মানুষ বংশপরমপরায় বছরের পর বছর নৌকায় পারাপার হয়ে আসছেন। গ্রামের বাইরে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই নৌকা। বৈরী আবহাওয়ায় রুদ্ধ হয়ে যায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যমটিও। এতে অনেক সময় মুমুর্ষ রোগী কিম্বা জরুরী কাজে অন্যত্র যাওয়া মানুষকে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।
গত ২৯ নভেম্বর ঝাঁপা গ্রামের ডাক্তার আজিবর সরদারের বড় ছেলে শামসুজ্জামান মন্টু (৫৮) অসুস্থ হয়ে পড়েন। পারাপারের বিড়ম্বনায় তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। ৬ মার্চ রাতে সবজি বিক্রেতা মতিয়ার রহমানের প্রসূতি মেয়ে রোকেয়া বেগমকেও হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় এলাকাবাসীর। এর পরেই এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে যুবকদের অর্থায়নে ভাসমান সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অন্যতম উদ্যোক্তা ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহেদী হাসান টুটুল জানান, সরকারি দপ্তরগুলোতে বার বার আবেদনের পরও সাড়া না পেয়ে ভাসমান সেতু নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মিটিং করা হয়। তাতে সাড়াও মেলে আশাতীত। সংগঠনের ৫৬ জন সদস্যের অর্থ সংগ্রহ শুরু করা হয়। পরিকল্পনা করা হয়ে ১৩শ ফুট দৈর্ঘ্যর ভাসমান সেতু নির্মাণের। সংগঠনের বাইরে কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এগিয়ে এসেছেন। আজিজ নামের এক ব্যক্তি জমি বন্ধক রেখে টাকা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ভাসমান সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩শ ফুট ও প্রস্থ ৯ ফুট। আর সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে ৮শ ৮৯টি বড় আকারের প্লাস্টিকের ব্যারেল। যা সংযুক্ত রাখার জন্য লোহার শীট ব্যাবহার করা হয়েছে। একই সাথে ব্যারেলের উপর দিয়ে চলাচলের জন্য দেয়া হয়েছে লোহার পাত। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে বৃহত্তর ভাসমান এ সেতুটি।
মেহেদী হাসান টুটুল উল্লেখ করেন, সেতুর উপর দিয়ে ভ্যান, রিকশা ও ইজিবাইকসহ হালকা যান চলাচল করতে পারবে।
আরেক উদ্যোক্তা ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান বলেন, প্লাস্টিক ব্যারেল নির্মিত ভেলার উপর ভারি মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখেই এ ভাসমান সেতুর ধারণা নেয়া হয়। এরপর উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেই সেতু নির্মাণের উদোগ নেওয়া হয়। সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর আগে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আগামী পহেলা জানুয়ারি সাধারণ মানুষ ও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে ভাসমান এ সেতুটি।
মণিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী আবু সুফিয়ান বলেন, আমার জানামতে দেশে এ ধরনের ভাসমান সেতু আর নেই। এটিই প্রথম ভাসমান বড় সেতু। সেতুটি মানুষ চলাচলের জন্য ভালো। কিন্তু ভারি যান চলাচলে করলে কোনো কারণে ব্যারেল লিকেজ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন