দিনাজপুরসহ রংপুর অঞ্চলে সিবি-১৪ এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলা চাষ বাড়ছে। প্রযুক্তিগতভাবে সাথী ফসল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তুলা চাষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে তুলা চাষের সম্ভাবনা অফুরান।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের ভূমি এবং আবহাওয়ার কাণে মৌলিক ফসলের পাশাপাশি তুলার চাষ বেড়েছে। আর এই তুলা চাষ আরো বাড়ালে প্রতি বছর আমদানি খরচ কমবে ১২ হাজার কোটি টাকা থেকে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। তাদের মতে, এই কৃষি পণ্যটি হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের হোয়াইট গোল্ড।
বর্তমানে সমতল, পাহাড়ি ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত ভূমিতেও তুলার আবাদ করা হচ্ছে। তবে নবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চলে। তুলার সাথী ফসল হিসেবে বারী মুগ-৬, লালশাক, মূলাশাক, ডাটা, ধনিয়া পাতা, বাদাম, তিল, মাস কলাই, পাট বীজ, গীমা, কলমি, ধান, কলা ও অন্যান্য ফসলও উৎপাদন করা সম্ভব। এতে একই জমিতে দুধরণের ফসল উৎপাদন ও অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব।
জানা গেছে, ১৯৭৩-৭৪ সনে বাংলাদেশে সমভূমির তুলাচাষ শুরু হওয়ার পর থেকে তুলা চাষ এলাকা ও উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সাম্প্রতিককালে হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল জাতের তুলাচাষ প্রবর্তনের ফলে তুলার ফলন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে তুলার বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিদের তুলা এখন একটি লাভজনক ফসল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
বর্তমানে তুলা উন্নয়ন বোর্ড তুলা গবেষণা, এর সম্প্রসারণ, বীজ উৎপাদন ও বিতরণ, প্রশিক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও জিনিং এবং ঋণ বিতরণ প্রভৃতি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। বর্তমানে তুলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল এবং বস্ত্র শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। বর্তমানে সমতল এলাকার ৩৪টি জেলায় সমভূমির জাতের তুলার আবাদ হচ্ছে এবং অতি সম্প্রতি ৩টি পার্বত্য জেলাতেও পাহাড়ি জাতের পাশাপাশি সমভূমির জাতের তুলার চাষাবাদ হচ্ছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে চাষিদের সঙ্গে নিয়ে তুলা উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং দিন দিন এর সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে চলেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে যত অর্থকরী ফসল রয়েছে লাভের দিক দিয়ে তুলা অন্যতম।
শুধু দিনাজপুর সদর উপজেলার নয়নপুর এলাকার কৃষক আবু বককর নয়, উত্তরাঞ্চলের অসংখ্য কৃষক এখন সাথী ফসল হিসেবে চাষ করছেন সিবি-১৪ এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলা।
বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ আল মামুন জানান, উচ্চফলনশীল জাত সিবি-১৪ চাষ করে বিঘাপ্রতি ১২ মণ ও হাইব্রিড তুলা চাষ করে ১৫ মণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। রংপুর অঞ্চলে সাড়ে ১৭ হাজার চাষী এখন জড়িয়ে পড়েছেন, তুলা চাষে।
ধান, পাট, তামাক, গম,আলুতে লোকসানের সম্ভাবনা থাকলেও তুলা চাষে লাভ রয়েছে। তুলার মূল্য নির্ধারণ থাকায় লোকসানের কোন আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কাশিডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আহছান আলী। তিনি বলেন, তিনি ২ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন। গত বছর ১ বিঘায় ৩০ হাজার টাকা লাভ করে এবার তুলা চাষে জমি’র পরিমান বাড়িয়েছেন।
তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ জিল্লর রহমান জানান, তুলা একটি অর্থকরী ফসল। দেশের জলবায়ু ও মাটি তুলা চাষের উপযোগী হওয়ায় সারা দেশে তুলা চাষ সমপ্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের দেশে কার্পাস তুলা চাষ হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, তুলা ফসলের পাতা মাটিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। এদিকে অধিক ফলনের জন্য তুলা চাষে আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণের লক্ষ্যে কৃষকের দ্বারপ্রান্তে তুলাচাষি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কৃষি খাতে উন্নয়ন ঘটিয়ে সরকার বস্ত্র খাতের দিকে ঝুঁকেছে।
আর এ কারণে সমপ্রসারিত তুলা চাষ প্রকল্প ক্লেজ-১ নামক প্রকল্পের তুলা চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী চার বছরের জন্য ১০৫ কোটি টাকা একনেকের বৈঠকে অনুমোদন দিয়েছে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে রংপুর জোনে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা আবাদের মাধ্যমে ৪-৫ লাখ বেল তুলা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন