গভীর রাতে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ায় রাজধানীর আদাবর শ্যামলী হাউজিং দ্বিতীয় প্রকল্প এলাকায় ঘুমন্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিহতের নাম কবির হোসেন। তিনি ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
সোমবার রাত সাড় ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় সবাই ঘুমে ছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে ভুক্তভোগীরা বলেন, আদাবরের শ্যামলী হাউজিং বেড়িবাঁধের ওপরে আমরা একটি পুরনো সিলিন্ডার দেখতে পেয়েছি। সেটা থেকে এখনো গ্যাস ছড়াচ্ছে। সিলিন্ডারের কাছাকাছি যেতেই নাকে একটি তীব্র গন্ধ আসছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বেড়িবাঁধের ওপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কালুর ভাঙ্গারি দোকানে এই সিলিন্ডারটি ভাঙার সময় হঠাৎ গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এতে আশপাশের টিনশেড বাসায় ঘুমিয়ে থাকা অর্ধশত মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন স্মার্ট টেকনোলজির গ্যারেজ ম্যানেজার আবুল হাশেম। তিনি বলেন, “শ্যামলী হাউজিং দ্বিতীয় প্রকল্পের বেড়িবাঁধের পাশেই স্মার্ট টেকনোলজির গাড়ির গ্যারেজ ও পরিবহন কর্মীদের থাকার স্থান। এখানে অন্তত ২৫ জন লোক বিভিন্ন রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। আমিও গ্যারেজে আসা গাড়ির হিসাবনিকাশ করে ঘুমিয়ে যাই। রাত সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ বিষাক্ত গ্যাসের গন্ধে ঘুমের মধ্যেই অসুস্থতা বোধ করি। দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে দেখি অনেকেই আমার মতো ছটফট করছে। কেউ দৌড়ে রাস্তায় বের হয়েছে। কেউ রুমের সামনেই অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিল।”
আবুল হাশেম আরও বলেন, “আশপাশে কেউ নেই। আমি অফিসে বিষয়টি জানানোর পরে কয়েকজন এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অক্সিজেন নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে আমি চলে এসেছি। তবে অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। তিনি স্মার্ট টেকনোলজির কর্মী রুহুল আমিনের চাচাতো ভাই। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। আর গুরুতর আহতরা হলেন- রুহুল আমিন, রাকিব, ওয়াদুদ, মন্নান, সিরাজ, জাহিদ, রাহিম, মেহেদী ও রকি। তারা সবাই স্মার্ট টেকনোলজির কর্মী।”
এছাড়াও স্থানীয় অনেকে অসুস্থ হয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে তাদের নামপরিচয় জানা যায়নি।
স্মার্ট টেকনোলজি গ্যারেজের নিরাপত্তা কর্মীর বরাত দিয়ে আবুল হাশেম আরও বলেন, “বেড়িবাঁধের ওপরে ভাঙ্গারি দোকান আছে। ওখানে রাতেও কাজ চলছিল। আমাদের রাতের নিরাপত্তা কর্মী দেখেছে একটি ট্রাকে করে ভাঙ্গারি আনা হয়। এই ট্রাক চলে যাওয়ার কিছু সময় পরই এই গ্যাস ছড়াতে থাকে। তখন দোকানের লোকজন সব ফেলে পালিয়ে যায়।”
এ দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, “এখান পরিস্থিতি ভালো। অসুস্থদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একজন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। সিলিন্ডারে কী ধরনের গ্যাস রয়েছে সেটি জানতে সিআইডিকে খবর দেওয়া হয়েছে।”
ওসি আরও বলেন, “এই ভাঙ্গারি দোকানের সবাই পলাতক। আমরা কাজ করছি।”
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শফিউর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, “আমাদের হাসপাতালে নয়জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। পাঁচজন এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন। মোট ১৪ জন রোগী এসেছিলেন। কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের বিষক্রিয়ায় এই দুর্ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবাই শ্বাসকষ্ট অনুভব করছেন।”
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন